স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরের সালথায় সরকারি স্থাপনায় নজীরবিহীন তান্ডবে বিএনপির সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন এ হামলার ঘটনায় ওয়াহিদ জড়িত থাকলেও তাকে আসামী করা হয়নি কোনো মামলায়। যে কারণে তিনি এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় ইন্ধন দিয়েও বীরদর্পে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

সালথা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদের সাবেক কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর বলেন, ৫ এপ্রিল রাতে গুজব ছড়িয়ে ফরিদপুরের সালথায় তিন ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালিয়ে সরকারি অফিস তছনছ করে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ও আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীরা। এ সময় হামলাকারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমল্পেক্স ভবনেও হামলা করে তারা। এ বিষয় আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) স্থানীয় ভাবে তদন্ত করি। এতে দেখা যায়, হামলায় অংশ নেওয়া গুলিবিদ্ধ ৭ ব্যক্তিই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াহিদের সমর্থক। এছাড়া ওয়াহিদের ঘাটি হিসেবে পরিচিত তার নিজ এলাকা ভাওয়াল ইউনিয়নের ইউসুফদিয়া, দরজাপুরুরা ও তুগুলদিয়া গ্রামের শতশত মানুষ হামলায় অংশ নেয়। যার বেশিরভাগই ওয়াহিদের সমর্থক।

তিনি আরো বলেন, হামলার রাতে ওয়াহিদ নিজে নেতৃত্ব দিয়ে তার সমর্থকদের অংশ নিতে উৎসাহ করে, যা দরজাপুরুরা গ্রামের শতশত মানুষ দেখেছে। অথচ হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা হলেও একটিতেও তাকে আসামী করা হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক।

আরো দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা ইচাহাক মাতুব্বর ও সাহেদ আলী বলেন, ঘটনায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতপন্থীদের আধিক্য থাকলেও তাদের উস্কে দেন সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ওয়াহিদুজ্জামান। তার টার্গেক ছিল বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর হামলা ও তার বাসভবন ভাঙচুর করা। এই জন্য হামলা সময় তিনি তার সমর্থকদের উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থানরত বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতীদের সাথে মিলে তান্ডব চালাতে উস্কে দেয়। সেই রাতে ওয়াহিদের ভূমিকা এখনও অনেকের চোখে ভাসলেও তার নামে মামলা হয়নি। যা মেনে নেওয়া যায় না।

সেই হামলার রাতের প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান জুয়েল বলেন, উপজেলার সামনে বাইপাস সড়কে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার সমর্থকদের নেতৃত্ব দিতে দেখেছি বিএনপি সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে। তিনি আওয়ামী লীগে এ পর্যন্ত তিন বার যোগ দিয়েছে। ওয়াহিদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে। একের পর একে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। উপজেলার হামলার ঘটনায় সে সরাসরি জড়িত থাকলেও কেন তাকে আসামী করা হলো না, এটা বুঝতে পারছি না।

তবে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমরা আগে বিএনপি করলেও উল্লেখযোগ্য পদপদবী ছিল না। আমি এখন সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ করি। তিনি বলেন, যারা হামলা করেছে তারা বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত সমর্থক। হামলায় আমাদের আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত না। হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছি আমরা। এটা সবাই দেখেছে। কিন্তু দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকায় প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসাতে এসব মিথ্যা-ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ধরছে একটি মহল।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলীমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এঘটনায় পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের দায়ের করা পৃথক ছয়টি মামলায় প্রায় তিনশ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও হাজারো ব্যক্তির নাম রয়েছে অজ্ঞাত। মামলাগুলোর তদন্তে ওহিদুজ্জামান বা যে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে অভিযুক্ত করা হবে। এ হামলায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।

প্রসঙ্গত, লকডাউনকে কেন্দ্র গুজব ছড়িয়ে গত ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে তা-ব চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। এ ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়।

(এন/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০২১)