উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : হবিগঞ্জের নানা ধরনের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে এক এমপির নির্দেশে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে হবিগঞ্জে শহরে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ এপ্রিল সোমবার দুপুরে।

দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাশ গুপ্ত অভিযোগ করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের নির্দেশে আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

শাহ আরজুর ডাকা 'সচেতন নাগরিক সমাজ' এর ব্যানারে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে গত সোমবার বেলা ১ টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের চিড়াকান্দির পত্রিকাটির অফিসে হামলা করে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের উপস্থিতিতেই ভয়ঙ্কর ওই হামলা চালানো হয়। সোমবার দুপুর থেকেই হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহির নেতৃত্বে নোয়াবাদ, শংকরের মুখসহ দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অফিসের প্রবেশদ্বারের আশেপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জড়ো হয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জড়ো হওয়ার একপর্যায়ে তাদের নেতৃত্বে পত্রিকা অফিসে হামলা করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তারা। পথিমধ্যে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাস গুপ্ত’র শ্বশুরের বাসায় তারা হামলা চালায়। হামলাকালে ওই বাসার বিভিন্ন দরজা জানালা, আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় ও লুটপাট চালানো হয়।

এমনকি বাসার পানির ট্যাঙ্ক ও পানির পাইপ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় বাসায় থাকা তার বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয় মূল্যবান স্বর্ণালাকার, নগদ টাকা, ব্যাংকের চেকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এ সময় দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ওই বাসার ছাদের উপর আশ্রয় নেন। প্রায় আড়াই ঘন্টা ব্যাপী এই তাণ্ডব চলে। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় আশেপাশের প্রায় ১০ থেকে ১৫টি হিন্দু বাসা-বাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীদের থাকা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা সম্পাদক সুশান্ত দাস গুপ্তকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

অপরদিকে নোয়াবাদের মুখ হতে হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন কলি’র নেতৃত্বে উৎপল রায়, জেলা যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী সুমন, শেখ নিজাম, মুক্তার হোসেন, হাবিবুর রহমান ও তাদের সহযোগীরা বাসায় ঢুকে তান্ডব ও লুটপাট চালায়। আর বাসার বাইরে ছিলেন ইমরান নাজির, রিপন হাসান, ইয়াকুব, তারেক, তানভিরসহ অনেকেই। তাদের সাথে ছিলেন ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল আলমপুর গ্রামের সাবাজ ও সাকিল, উমেদনগরের নয়াহাটির সবুজ, সেলিমসহ দুই থেকে আড়াইশত সন্ত্রাসী।

শংকরের মুখ দিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গৌতম কুমার রায়, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মাহি এবং সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাব্বির আহমেদ রনি, পৌর ছাত্রলীগের ফয়জুর রহমান রবিনের নেতৃত্বে আজিমুল হক জনি, আমীর উদ্দিন জিসান, শাহ বাহার, ধ্রুব জ্যোতি দাস টিটু, আব্দুর রকিব, বিপ্লব রায় সুজন, সাইদুর রহমান, আকাশ রহমান, জোবায়ের আহমেদ, ইমতিয়াজ শাওন, আবু বক্কর সিদ্দিকি রাহুল, জাকির আহমেদ, ইকবাল খানসহ ১০০/১৫০ জন উশৃঙ্খল নেতাকর্মী পত্রিকা অফিসে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে ঢুকতে না পেরে অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এতে অফিসে থাকা দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার ৪/৫জন সাংবাদিক ইটের আঘাতে আহত হন।

কর্মকার পট্টির মুখ দিয়ে পৌর যুবলীগের আহবায়ক ইসতিয়াক রাজ চৌধুরী, জেলা যুবলীগ নেতা জলিলুর রহমান বদরুল, আলম মিয়াসহ আরো শ’খানেক লোক হামলা ভাংচুরে অংশ নেয়।

খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা চালায় তারা।

এনডিসি ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শেষ মুহূর্তে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশকের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর লুটপাট রুখে দেওয়া হয়। তারা মাত্র ৫ মিনিট দেরিতে আমাদের বাসা ভাংচুর ও লুটপাট রুখে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন যদি আর ৫ মিনিট দেরীতে পদক্ষেপ নিতেন তাহলে ঘটে যেতো আরও ভয়ঙ্কর ঘটনা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি মন্দিরের জায়গা দখল বিষয়ক একটি খবর প্রকাশ করে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা। এই খবরে ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহির।

পত্রিকাটিতে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, এমপির সেই ক্ষোভ থেকেই সম্পাদক সুশান্ত দাস গুপ্তকে হত্যা করতেই সোমবারের ওই হামলা ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশসহ র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০২১)