স্টাফ রিপোর্টার : বিগত বিজয় দিবস ও বৈশাখী ভাতাই শুধু নয়, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সম্মানী ভাতা অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাননি বলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে । চলমান করোনা মহামারীকালীন এই ভাতা জটিলতার প্যাঁচে পড়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরমতম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছেন । এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এহেন জটিলতা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তি দেয়ার জন্যে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে উপরোক্ত আহ্বান জানিয়ে আবীর আহাদ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের অসহযোগিতায় সৃষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ভাতা জটিলতা আসছে ঈদের সময়ও আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে অনুমিত হচ্ছে । কারণ এসময় এপ্রিল-মে মাসের সম্মানী ভাতাসহ ঈদ বোনাসের বিষয়টিও রয়েছে । সব মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভাতাজটের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন ।

আবীর আহাদ বলেন, দেশের ৯০% মুক্তিযোদ্ধা আর্থিকভাবে চরম অস্বচ্ছল । সম্মানী ভাতার ওপর তাদের সংসার চলে । প্রায় সবাই বয়সে বৃদ্ধ ও নানান রোগে আক্রান্ত । তার ওপর মরার ওপর খড়ার ঘা হিশেবে চলছে অতিমারী করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব । অথচ সেই ভাতা তারা ঠিক মতো পান না । এ ধরনের ভাতা জটিলতা সৃষ্টি হতো না যদি প্রতি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি ছোটোখাটো দপ্তর থাকতো । কী এক দারুণ অব্যবস্থা এই যে, মুক্তিযোদ্ধাদের দেখভাল করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় থাকতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের মর্জির ওপর ! আবার এটাও বাস্তব সত্য যে, উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মচারীরা তাদের নিজেদের দপ্তরের কার্যক্রম নিয়েই হিমশিম খান, তার ওপর আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ! ফলে মুক্তিযোদ্ধারা এ অব্যবস্থার শিকার হচ্ছেন ।

আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যেখানে বিদ্যমান, যেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো এখনে মন্ত্রী আছেন, সচিব আছেন , অতিরিক্ত-যুগ্ম-উপ-সহকারী সচিব আছেন, কেরানি-হিসাব রক্ষক আছেন, পিয়ন -দারোয়ান-চাপরাসি-ভ্রাইভারসহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন---সেখানে তাদের জেলা ও উপজেলায় কোনো দপ্তর নেই ! অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের জেলা-উপজেলায় দপ্তর আছে, যেমন জনপ্রশাসন (ডিসি-ইউএনও), স্বরাষ্ট্র (পুলিশ ) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শাখা অফিস রয়েছে, সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় হয়েও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোনো দপ্তর নেই ! আমাদের মন্ত্রী মহোদয় ও সচিব সাহেবদের মস্তিষ্কে কেনো যে এ প্রসঙ্গটির উদয় হয় না তা আমাদের বোধগম্য নয় । অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের শাখা দপ্তরের জন্য নিজস্ব কোনো স্থাপনা না থাকলেও প্রতিটি জেলা- উপজেলায় কিন্তু বহুকক্ষ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স রয়েছে । এসব কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে একজন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, একজন কম্পিউটার অপারেটর- কাম-অফিস সহকারী ও একজন পিয়ন নিয়োগ করে সহজেই মুক্তিযোদ্ধা দপ্তর সৃষ্টি করা যায় । এ প্রক্রিয়ায় কিছু লোকের কর্মসংস্থানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও অন্যান্য বিষয়াদি কোনো জটিলতা ছাড়াই সম্পাদন করা যেতো ।

আসছে ঈদকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাদের বকেয়া ও হালনাগাদ ভাতাদি পরিশোধ ও আগামী অর্থ বছর থেকে প্রতি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটা দপ্তর স্থাপন করার জন্য আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।

(এ/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২১)