ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : চট্রগ্রামের বাঁশখালিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় চিকিৎসাধিক অবস্থায় গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মারা গেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রামের গুলিবিদ্ধ শ্রমিক রাজেউল ইসলাম (২৫)।

নিহত রাজেউল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান মন্ডলের ছেলে এবং বাঁশখালির এস আলম গ্রুপের কয়লা দুবাসী পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের ফিল্টারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে শ্রমিকরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু এস আলম গ্রুপের কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানান। এতে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে। এরমধ্যেই শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন শ্রমিক নিহত এবং গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্নভাবে আহত হন শতাধিক শ্রমিক। শ্রমিকদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। পুলিশের গুলিতে আহতদের মধ্যে ফুলবাড়ী উপঝেলার নথন জামদানি গ্রামের শ্রমিক রাজেউল ইসলামও ছিলেন। তিনি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত দেড়টায় মারা যান।

নিহত রাজেউল ইসলামে মামা রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে জানতে পারি রাজেউল গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এরপর সেখানে যাই। চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাজেউল সেখানে মারা যায়। তার লাশ গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাতে গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে এসে দাফন করা হয়েছে।

চাচাতো ভাই মোবারক হোসেন বলেন, তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল রাজেউল। তার বড়ভাই সৌদি প্রবাসী ও বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দিনমজুর পিতার পরিবারের অভাব অনটন ঘুচাতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করেই রাজেউল কর্মে নেমে গিয়েছিল। এ কারণে গত ছয় মাস আগে বাঁশখালি দুবাসী পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের ফিল্টারম্যান হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিল। প্রতি মাসে তার পাঠানো টাকায় পরিবারের অনেকটাই দুঃখ ঘুচতে শুরু করেছিল। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজেউলের মৃত্যুতে নিভে গেলে একটি পরিবারের স্বপ্নের প্রদীপ।

নিহত রাজেউলের মা ওয়াজেবুন হানার বিলাপ করে বলেন, আমি আর টাকা-পয়সা চাই না, না খেয়েই থাকব কিন্তু আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। আমার ছেলেকে কেন এভাবে কেড়ে নিল আমার কাছ থেকে? কি অপরাধ ছিল তার? একটা মায়ের কোল খালি করতে কি একটুকুও মায়া হলো না তাদের? তারা কি কোন মায়ের সন্তান না ? তাদের কি কোন ছেলে মেয়ে নাই...?

বেতদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, রাজেউলের বাঁশখালিতে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার জানতে পেরে সাথে সাথেই তার পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু চিকিৎসাধিন অবস্থাতেই রাজেউলের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে তার লাশ এনে গ্রামের বাড়ীতে দাফন করা হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, গত তিন-চারদিন আগে রাজেউলের পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি রাজেউল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সেখানে তাদেরকে যাওয়ার জন্য মুভমেন্ট পাশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানে মাধ্যমে জানতে পারি চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজেউলের মৃত্যু হয়েছে এভং লাশ বাড়ীতে এনে দাফন করা হয়েছে।

(এসিজি/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২১)