আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য মেডিসিন সরঞ্জাম সরবরাহ করে ‘বিশ্বের ফার্মেসী’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ৯০ এর অধিক দেশে টিকা সরবরাহ করেছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি লাতিন আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়েতে কোভিড ভ্যাক্সিনের এক লক্ষ ডোজ সরবরাহ করেছে দেশটি।

ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতি বর্তমানে গোটা বিশ্বেই বহুল চর্চিত বিষয় হলেও, প্যারাগুয়েকে উপহার দেয়া কোভিড টিকার পেছনে অন্যরকম কিছুর সন্ধান পেয়েছেন ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ‘এফপি’-তে যৌথভাবে বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হার্ষ ভি পান্ট এবং প্রেমাশা সাহা।

নিবন্ধটিতে চীনের সঙ্গে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের কথন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে ভারতের অলিখিত কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। নিবন্ধটি থেকে জানা যায়, তাইওয়ান বরাবরই নিজেদেরকে স্বাধীন ভূখন্ড এবং দেশ হিসেবে দাবি করে এসেছে। কিন্তু চীন সবসময়ই তাইওয়ানকে নিজেদের অধিভূক্ত ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে। এ নিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে থাকলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবরই চীনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। ভারত সরকারও কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

বিশ্বের যে কয়টি হাতে গোনা দেশ তাইওয়ানকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাঁদের অন্যতম লাতিন আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়ে। বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় প্যারাগুয়ে অন্যতম শীর্ষে আরোহণকারী দেশ। আর তাঁদের এ দুর্বলতাটিকে কাজে লাগিয়েই ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে চীন।

তাইওয়ান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বু সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, প্যারাগুয়েকে বিশাল পরিমাণে ভ্যাকসিনের ডোজ সাপ্লাই এর বিনিময়ে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রস্তাব দিয়েছে চীন।

এমন পরিস্থিতিতে প্যারাগুয়ে সরকার চাপের মুখে রয়েছে জানিয়ে, তাঁদের সাহায্যার্থে জাপান, আমেরিকা, ভারত সহ সমমনা ভ্যাকসিন উৎপাদক দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানায় তাইওয়ান। তাঁদের এ আহবানে সাড়া দিয়েই মূলত প্যারাগুয়েকে এক লক্ষ কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে সাহায্য করলো ভারত।

যদিও এ ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে প্যারাগুয়ের অনুরোধেই তারা ভ্যাকসিন গুলো সরবরাহ করেছিলো, কিন্তু এ ব্যাপারে তাইওয়ানের স্পষ্ট ভূমিকা খুঁজে পেয়েছেন নিবন্ধটির লেখকদ্বয়। তাইওয়ান ক্রমশই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।

ভূ-রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক নেতৃত্ব বিকাশে ভারত বর্তমানে তাইওয়ানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক, বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে বলে অভিমত দেন লেখকদ্বয়। ২০১৮ সালে দেশ দুটোর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ভারতের বিশাল বাজার তাইওয়ানের জন্য স্পষ্টতই বড় বিনিয়োগের সুযোগ এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে তাইওয়ান এবং ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাইওয়ান ভূখন্ডের প্রায় ২০০ টি সংস্থা ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ভারতের টেলিযোগাযোগ সংস্থা ওপটিমাস ইনফ্রাকম ও তাইওয়ানের উইস্ট্রন কর্পোরেশন টেলিযোগাযোগ পণ্য তৈরীর জন্য নিজেদের মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি সই করেছে।

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন লেখকগণ। চীন প্রসঙ্গ বাদ দিলেও ভারতের সঙ্গে তাইওয়ানের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাণিজ্য, চিকিৎসা, প্রযুক্তিগত সহ প্রভূত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এদিকে, এমন এক সময়ে তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো, যখন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও তাইওয়ানের প্রতি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে সহানূভুতিশীল হচ্ছে। ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২১)