ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধিকে মারপিটের আসামীকে ধরে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে থানার ওসি ফখরুল ইসলামের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

এর আগে ফুলবাড়ী ওসি ফখরুল ইসলামের অপসারণসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পৌরসভার প্যানেল মেয়রকে মারপিটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওসির অপসারণের দাবিতে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপী ফুলবাড়ী-দিনাজপুর-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারী ও পুরুষ।

এ সময় বক্তব্য রাখেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম আকন্দ, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নীরু সামসুন্নাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস, ফুলবাড়ী পৌরসভার প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী প্রমুখ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন ও পৌর সভার প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের আজিজার রহমান শাহ এবং তার ভাতিজা গোলাম মোস্তফা শাহের মধ্যে জমিজমার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্যানেল মেয়রের নিজস্ব কার্যালয়ে গত বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে ১১টার দিকে বৈঠক বসে। বৈঠকে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় গণমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পৌর শাখা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক বিভিন্ন অপকর্মের হোতা শাহেদ ইসলামের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী গোলাম মোস্তফার পক্ষ নিয়ে বৈঠক স্থালে এসে বৈঠকে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদেরসহ প্যানেল মেয়রকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিজ করার এক পর্যায়ে শাহেদ ইসলামের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্যানেল মেয়রের অফিস কক্ষে ঢুকে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরসহ প্যানেল প্যানেল মেয়রকে মারপিট করে কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাংচুর চালিয়ে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ সময় স্থানীয়রা কয়েকজনকে সন্ত্রাসীকে আটক করে ওসি তদন্ত মাহমুদুল হাসানের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আটককৃতদের ছেড়ে থানায় না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকার অন্তত তিন শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারী ও পুরুষসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা থানায় অবস্থান নিয়ে দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা চত্বরে অবস্থান করেন। এ ব্যাপারে ওইদিনই ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং-৯।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে শৈথল্য দেখিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানদের অপমাণিত করেছেন। এ কারণে তাকে অপসারণ প্রয়োজন।

এদিকে অবরোধের কারণে সড়কের দু’পার্শ্বে তিন শতাধিক পণ্যবাহী যান আটকা পড়ে। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ইউএনও রিয়াজ উদ্দিন এবং ফুলবাড়ী সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে ওসির কার্যক্রম স্থগিত হওয়াসহ তাকে সাত দিনের মধ্যে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অবরোধকারিদের জানান।

ফুলবাড়ী সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন,‘আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। ওসির সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। আসামীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওসিকে দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিতকারীদের গ্রেপ্তারে গড়িমশি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। ওসিকে তার কার্যক্রম থেকে তাঁর কর্তৃপক্ষ সরিয়ে দিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

(এসিজি/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২১)