স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে পুরনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে যারা ছড়িয়েছে, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। বাহিনীটির তরফ থেকে বলা হয়েছে, এভাবে পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব রটানোয় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে র‌্যাব সদরদফতরে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

পুরনো ভিডিও লাইভ করতো সংগঠনটির আইটি টিম। যারা এ ধরনের আ্যপস ব্যবহার করতো তাদের র‍্যাব শনাক্ত করেছে। তারা বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দিয়ে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে দিতো। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে র‍্যাব অভিযান পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল রয়েছে। আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল শনাক্ত করেছে যে, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওই সংগঠনের আইটি টিম পুরনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে ছড়াতো। যারা এ ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করতো র‌্যাব তাদের শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনবে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল, ঠিক তখন থেকেই একটি কুচক্রী মহল দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। র‌্যাব এসব ব্যক্তি বা দলকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র দেখে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে।

‘এসব অপরাধী শনাক্তে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এসব অপরাধী শনাক্তের পর আটক করে র‍্যাব আইনের আওতায় আনছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাবই প্রথম অভিযান চালিয়ে আটক করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়কালে ঘোড়ায় চড়ে বিক্ষোভ করা হেফাজতের এক কর্মীকে। শিশু বক্তাখ্যাত রফিকুল ইসলামকেও র‍্যাব গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দল কিংবা গোষ্ঠী যারা— নাশকতার চেষ্টা করেছে কিংবা নাশকতার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে, সবাইকেই ধাপে ধাপে র‍্যাব গ্রেফতার করবে এবং তাদের আইনের আওতায় সোপর্দ করা হবে। ইতোমধ্যে হেফাজতের ১২ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

গ্রেফতার ১২ জনের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগেরই দেশের বিভিন্ন জেলায় নাশকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন, যারা নাশকতা সৃষ্টির জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। তাদের আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেছি।

তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা বেশিরভাগই নাশকতা করার জন্য অনলাইনে বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়েও র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা কাজ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখেছি নেতৃস্থানীয় নেতা কেউ গ্রেফতার হলে তারা পুরনো ভিডিও ‘লাইভ’ বলে শেয়ার দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

কতোগুলো পেজ কিংবা ওয়েবসাইট দিয়ে তারা এসব ‘লাইভ’ করতো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র‍্যাব শতাধিক পেজের সন্ধান এখন পর্যন্ত পেয়েছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ‘লাইভ’ করতো। আমরা একজন ব্যক্তির নামে একাধিক আইডি পেয়েছি, ওই আইডিগুলো দিয়ে এসব ‘লাইভ’ শেয়ার দেয়া হত।

যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের সঙ্গে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‍্যাব কোনো দল কিংবা ব্যক্তিকে টার্গেট করে অভিযান পরিচালনা করে না। যারা দেশব্যাপী নাশকতা সৃষ্টি করেছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যাদের গ্রেফতার করেছি তাদের বেশিরভাগেরই নিজেদের শক্তি জানান দেয়া এবং রাজনৈতিক পরিচয়টাকে জানান দেয়া ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ঢাল-তলোয়ার হিসেবে বিভিন্ন মাদরাসা বা এতিমখানার কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করেছে তারা।

মামুনুল হকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামুনুল হক যে দলের নেতা, সেই দলের কয়েকজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি বিভিন্ন মামলার আওতায়। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মামলা রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার জন্য মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা ও মামুনুল হক একই দলের মতাদর্শের।

গ্রেফতার অভিযান এবং র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান বাহিনীর এই কর্মকর্তা।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২১)