আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা অবশ্যই সরকারের। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো বিশ্বনেতারা এই লড়াই একা লড়ছেন না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলোর অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি খাত।

সায়েন্স বেসড টার্গেটস ইনিশিয়েটিভের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রযুক্তি, খাদ্য ও সেবা খাতের বড় বড় নামগুলোসহ অন্তত ৩৩৮টি প্রতিষ্ঠান ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সমন্বিতভাবে তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট নেতারা সরকারের প্রতি আরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪০০রও বেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।

তবে আমরা জানি, প্রতিষ্ঠানগুলো আরও অনেক বেশি করতে পারে এবং তাদের ততটাই করা উচিত। এর জন্য বেসরকারি খাত গ্রহণ করতে পারে এমন পাঁচটি পদক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:

বিজ্ঞান-ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানকেই কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সায়েন্স বেসড টার্গেটস ইনিশিয়েটিভ এই লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তাদের কাছে ১ হাজার ৩০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে আগামী মে মাসে প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) দেখাতে পারে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬১টি ‘ফরচুন ৫০০’-এর সদস্য (ফরচুন ৫০০ হচ্ছে ফরচুন ম্যাগাজিনের তৈরি ৫০০টি শীর্ষ মুনাফাধারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তালিকা)। ফরচুন ৫০০-এর আরও কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান ওই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে তাদের এই কাজ আরও দ্রুত এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।

কার্বন নিঃসরণের তথ্যপ্রকাশ

সময় এসেছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কার্বন নিঃসরণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার। এই তথ্য ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা অগ্রগতি বোঝা অসম্ভব। ডব্লিউডব্লিউএফের আসন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ফরচুন ৫০০-এর মাত্র ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সিডিপি (কার্বন ডিসক্লোজার প্রজেক্ট) প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এ অবস্থায় সরকার সার্বজনীনভাবে গৃহীত একটি কাঠামো গঠনে ধরিত্রী সম্মেলন ও অন্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে জলবায়ু সম্পর্কিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশে টাস্ক ফোর্স গঠনের সুপারিশ করা যেতে পারে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে সমন্বয়

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি ব্যবসার সমন্বয় করতে হবে। এর অর্থ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তর, স্থল পরিবহনে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিকরণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় কার্বন নির্গমন কমানো। অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সিমেন্ট, ইস্পাত এবং উড়োজাহাজের মতো শিল্প খাতে নিম্ন-কার্বন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

ভূমির ব্যবহার বিশ্লেষণ

প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টে ভূমির ব্যবহারের স্বীকৃতি দেয়া, এর প্রভাব জানানো এবং তার সমাধান করতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় বনাঞ্চল ধ্বংস ঠেকানোর মাধ্যমে এটি শুরু করা যেতে পারে।

রাজনৈতিক প্রভাবের ব্যবহার

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের জলবায়ু নীতিতে সমর্থন করা প্রয়োজন। এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ু এজেন্ডা এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি সেটি মার্কিন কংগ্রেসে সংকেত পাঠাবে যে, জাতীয় জলবায়ু আইন পাসের সময় এসেছে। নির্বাহী আদেশগুলো হয়তো ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টরা বাতিল করতে পারেন, তবে দ্বিপক্ষীয় জলবায়ু আইনটি দেশের প্রতিশ্রুতিকে আইনি রূপ দেবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকট সমাধানের পথে ধাবিত করবে। এটি অর্থনীতি, চাকরি, স্বাস্থ্য, সর্বোপরি গোটা গ্রহের জন্যই মঙ্গলজনক।

(সিএনএনে প্রকাশিত ডব্লিউডব্লিউএফের সভাপতি কার্টার রবার্টস এবং উই মিন বিজনেস কোয়ালিশনের প্রধান নির্বাহী মারিয়া মেনডিলুসের মতামত অবলম্বনে)

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০২১)