রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : করোনাকালে কুড়িগ্রামে বাহারি চেম্বার খুলে কম্পিউটারের মাধ্যমে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছে পল্লী চিকিৎসকরা। দেকভালের কেউ নেই। ফলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চমক দেখিয়ে গ্রামিণ গরীব রোগীদের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। দেদারছে দেয়া হচ্ছে এন্টিবায়োটিক প্রেসকিপশন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিসহ আর্থিক ক্ষতির মূখে পরছে এসব পরিবার। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মুখ খুলতে রাজী নন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

কয়েকদিন ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সিংহভাগ পল্লী চিকিৎকরা সাধারণ মানুষের দুর্বলতাকে পূজি করে ডাক্তার পরিচয়ে চমকপ্রদ চেম্বার খুলে প্রতারণার ফাঁদ খুলেছেন। তারা রোগ নির্ণয়ের জন্য কম্পিউটারের সাহায্য নিচ্ছেন। দিচ্ছেন এন্টিবায়োটিকের প্রেসকিপশন। এছাড়াও ভূয়া পরিচয় ও সরকারের অনুমোদন ছাড়াই করছেন ফার্মেসীর ব্যবসাও। সারা জেলা জুড়ে পল্লী চিকিৎসকরা এমন অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নিরব ভূমিকা পালন করছে।

জেলার উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াইহাট বাজারের পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাক নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কম্পিউটারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষাসহ এ্যন্টিবায়টিক প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। যেকোন রোগীকে তিনি প্রথমেই একটি ইনজেকশন পুশ করছেন। একই চিত্র কুড়িগ্রাম পৌরসভার ভেলাকোপা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ফয়জার আলমেরও। তিনিও নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে কম্পিউটারের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করে এ্যন্টিবায়টিক প্রেসক্রিপশন দেন। জেলায় এমন সিংহভাগ পল্লী চিকিৎসক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ।

পল্লী চিকিৎসক এমএ রাজ্জাকের কাছে চিকিৎসা নেয়া মজিবর রহমান (৫০) জানান, বুকের ব্যথা আর শ^াস নেওয়ায় কষ্ট হওয়ায় আজ্জাক ডাক্তারক দেখানো। তাই একটা ইনজেকশন দিয়া ৫শ টাকা আর কম্পিউটার দিয়া দেখায়া ৫শ টাকাসহ ভিজিট নেইল মোট ৬শ টাকা।

রোগী সুমি বেগম (২৮) জানান, আমার পায়ে বিখাউজ (ঘা) হয়েছে। ডাক্তার দেখি ইনজেকশন আর প্রেসক্রিপশন দিয়ে ৬শ টাকা নিলো।

শাহেরা বেগম (৫২) জানান, আমার মাথার সমস্যার কারণে ফয়জার আলম ডাক্তারকে দেখিয়েছি। তিনি আমাকে ৩টি ইনজেকশনসহ মেলা ঔষধ লিখে দিয়ে বলেন ৭দিনের চিকিৎসা দেবার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৬হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু সেই চিকিৎসায় ভালো না হয়ে উল্টো মাথার যন্ত্রণা বেশি হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। সেখানকার ডাক্তাররা বলেছে ভুল চিকিৎসার কারনে রোগী বড় ধরণের ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল বলেন, আমরা পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাই না। তারা ডাক্তারি পাশ করছে না কিনা সেটা বাপু জানা নাই। বহুদূর থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে আইসে সেটাই দেখি। কোন প্রশাসনের কোন লোকজন দেখতেও আসে না।

উলিপুরের নতুন অন্তপুর বাসিন্দা আজগর আলী জানান, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। আর হাসপাতালগুলাতে দালালের খপ্পরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য গ্রাম কন কিংবা চরের মানুষে কন তারা বাধ্য হয়ে পল্লী ডাক্তারের চিকিসা নেন।

পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিধি মোতাবেক রোগিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আর কম্পিউটারে একটি এ্যাপস দিয়ে রোগির রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেবার কথা স্বীকার করলেও ইনজেকশন দেয়া এবং এ্যান্টিাবায়টিক লেখার বিষয়ে অস্বীকার করেন। পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেবার বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো ঔষধ কোম্পানি হতে দিয়েছে।

এদিকে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ভেলাকোপা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ফয়জার আলম প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডাক্তার এবং এ্যন্টিবায়টিক লেখার নিয়ম আছে দাবী করে জানান, জেলায় প্রশিক্ষণ ছাড়াই অবৈধভাবে অনেকেই পল্লী চিকিৎসক চেম্বার খুলেছেন। পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তার বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। শুধু ভেলাকোপার পল্লী চিকিৎসক নয়, গোটা জেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু আনাড়ি চিকিৎসক নিয়মিত ভাবেই নিজস্ব ডাক্তারী প্যাড ব্যবহার করে এ্যন্টিবায়টিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এমনকি তাদের সাথে চুক্তি ভিত্তিতে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভরা যোগাযোগ করে এ্যন্টিবায়টিক ট্যাবলেট লিখে নিচ্ছে।

এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাবেক সিভিল সার্জন ডা: আমিনুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সাধারণ রোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেত এবং প্রতারণা বন্ধ করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উপর জোড় দেন তিনি।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২১)