শীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর জেলা শহরের উত্তর বালুচড়া গ্রামে এক সংখ্যালঘু হিন্দু বাড়িতে গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়েছে। বাড়ির পারিবারিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। উড়োচিঠির মাধ্যমে জীবননাশের হুমকি দিয়ে তিন জনের কাছে ২১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেছে। চাঁদা না দিলে দেশ ত্যাগে বাধ্য করানোর হুমকিও দেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ ইউএনও এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শণে গিয়ে জানা গেছে, সোমবার(২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর বালুচড়া গ্রামে রাত আনুমানিক ২ টার দিকে উত্তম চন্দ্র চন্দ’র বাড়িতে একটি লাকড়ি ঘরে কেরোসিন তেল দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। এসময় বাড়ির স্বরসতী মন্দিরে ভাঙচুর ও শীতলা মন্দিরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। শীতলা মন্দিরের ভেতরর হাতে লেখা ৪ টি চিরকুট আকরের উড়ো চিঠি রেখে গিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বসত ঘরগুলোতেও আগুন লাগানোর উদ্দেশ্যে কেরোসিন ছিটানো হয়েছিল।

উড়োচিঠিতে বলা হয়েছে, "তোরে শেখ হাসিনায় বাঁচাইতে পারবে না, বিজয় বাড়ি করলে জীবনে শেষ করিয়া দিমু, তোরে শেখ হাসিনায়ও বাঁচাইতে পারব না, উজ্জল ৬ লক্ষ টাকা দিবি, উত্তম ৫ লক্ষ টাকা দিবি, শ্যামল ১০ লক্ষ টাকা দিবি, এই চারালরা এই দেশ থেকে চলে যা, না গেলে মেরে ফেলব" ইত্যাদি।

বাড়িতে আগুন ও প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়ে উত্তম চন্দ্র চন্দ বলেন, রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, আগুন লাগানোর টের পেয়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আমাদের লাকড়ির ঘরে আগুন জ্বলছে। দুইটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পরে আছে। এ সময় ডাক চিৎকার দিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুলে আগুন নিভাই। শীতলা মন্দিরে গিয়ে চারটি চিঠি পাই, চিঠিতে টাকা চাওয়া হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। আমাদের সাথে কারো শত্রুতা নেই। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।

এবিষয়ে সদর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর বলেন, সারাদেশেই এখন ধর্মান্ধ মৌলবাদী গ্রুপ সক্রিয়। তারা দেশ জুরে এধরণের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড করতেছে। আমরা মনে করি, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সংখ্যালঘু পরিবারের প্রতি এটা কোন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘাটনার জরিতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।

শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন বলেন, আমি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। একটি জ্বালানী কাঠের ঘরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন লাগানো হয়েছিল। অন্যান্য বসত ঘরেও কেরোসিন ছিটানো হয়েছে। মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়ির লোকজন সময় মত টের না পেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি মনে করি, রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য এটি একটি নাশকতা। প্রসাসনের সহায়তায় দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।

শরীয়তপুর পুলিশ সুপার এস. এম আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে এসেছি, এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

(কেএন/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২১)