উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : হাজীগঞ্জে কমপক্ষে ৬০ বছর পর স্থায়ী মাটির রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। এর আগে রাস্তা তৈরি করতে যতোবার মাটির কাজ হয়েছে ততোবারই মাটি ক্ষয়ে জমির সাথে মিশেছে। এই রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হলে কমপক্ষে ৩ গ্রামের মানুষের ৮ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ বেঁচে যাবে। ইতিমধ্যে রাস্তাটির প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয় এমপির ডিউ লেটারের কারণে মাটির কাজ শেষ হলেই পাকাকরণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাকিলার আন্ধারভাঙ্গা থেকে শুরু হয়ে রাস্তাটি দেবপুর-রাজারগাঁও সড়কের আমিরবাজারে মিলেছে। সম্প্রতি বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইফসুফ পাটোয়ারীর উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে কাজটি শুরু হয়। সন্না ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে শুরু হয়ে গোগরা গ্রামের একাংশ হয়ে শ্রীপুরের আমির বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মিটার রাস্তা মাটির কাটার কাজ শুরু হয়েছে। উক্ত কাজের অর্ধেকটাই ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, প্রায় ৬০-৭০ বছর পূর্ব থেকে বাকিলা ইউনিয়নের সন্না ও গোগরা গ্রামের একাংশসহ দক্ষিণ শ্রীপুর ও উত্তর শ্রীপুরের প্রায় অর্ধলক্ষ জনগণ এই সড়ক ব্যবহার করে বাকিলা বাজারে যাওয়া-আসা করতো, যা এখনো চলমান রয়েছে। এই সড়ক ব্যবহার না করলে এই সকল গ্রামের সবাইকে রাজারগাঁও-দেবপুর সড়ক ধরে অতিরিক্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিয়ে বাকিলা বাজারে আসতে হয়। বিশেষ করে এই সকল গ্রামের মানুষের নির্মাণসামগ্রী, রোগী, বিয়েসহ যে কোনো মালামাল পরিবহন করতে হলে ৮ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত পাড়ি দেয়াসহ অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হতো। মাটির রাস্তাটির কাজ শেষ হয়ে গেলে উল্লিখিত গ্রামের লোকদের পথ ও অর্থ দুটোই বেঁচে যাবে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান আমলের বহু পূর্ব হতে এখান দিয়ে মানুষজন হাঁটাচলা করতো। সেই সময়ের লোকজন বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চলাফেরা আর শুষ্ক মৌসুমে জমি লেভেলে রাস্তা নিয়ে বাকিলা আসা-যাওয়া করতো। আশির দশকে শ্রীপুরের বাসিন্দা তথা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আবুল কালাম মাটি কেটে এই সড়কের কিছুটা উন্নতি করেন। এর পরের জনপ্রতিনিধিগণ পর্যায়ক্রমে মাটির কাজ করালেও সড়কটির স্থায়িত্ব আনা সম্ভব হয়নি অর্থাৎ ধীরে ধীরে ধীরে মাটি ক্ষয়ে সরু আর নিচু হয়ে গেছে সড়কটির। যার কারণে স্থানীয়রা শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চলাচল করতো। সম্প্রতি স্থানীয় চেয়ারম্যান রাস্তাটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার কাজ শুরু করলে স্থানীয়দের মাঝে আনন্দ দেখা দেয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় শ্রীপুর মাঠের ইরি-বোরো প্রকল্পের স্ক্রীম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় ৬০ বছর পরে রাস্তাটি স্থায়ীভাবে করা হচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত। রাস্তাটি হয়ে গেলে আমাদেরকে আর দেবপুর হয়ে ঘুরে বাড়ি আসতে হবে না।

গোগরা হাওলাদার বাড়ির মরহুর আলহাজ আব্দুর রশিদ হাওলাদের বড় ছেলে বাকিলা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী সৈয়দ আহম্মেদ হাওলাদার জানান, ছোটবেলায় বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া আমরা এই সড়কে চলাচল করতে পারতাম না। এখন যেভাবে রাস্তা তৈরি হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই রাস্তার ধরন দেখে খুশি।

ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাটি তৈরিকালে অনেক প্রতিবন্ধকতা পাচ্ছি। তারপরেও যতো বাধা আসুক এলাকাবাসীর সুবিধার জন্যে আমি এর কাজ শেষ করবো। মাটির কাজ শেষ হলে পাকাকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। কারণ রাস্তাটি পাকাকরণের জন্যে আমাদের মাননীয় সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম মহোদয় অনেক আগেই ডিউ লেটার দিয়েছেন।

(ইউ/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০২১)