নওগাঁ প্রতিনিধি : শারিরীক প্রতিবন্ধী হওয়ায় রশিদা বেগমকে (৩৫) প্রায় ১০ বছর আগে ছেড়ে চলে গেছেন স্বামী শহিদুল ইসলাম। বয়ঃসন্ধিক্ষণে ট্রাকচালক স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়িতেই সংসার পেতেছিলেন রশিদা। তাদের সংসার জীবনে আকাশ, চাঁদ ও শাহিন নামে তিন পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ক্রমেই সংসারের ব্যয় বাড়তে থাকে। 

একসময় স্ত্রী-সন্তান রেখে অনেকটা চুপিসারে সটকে পড়েন স্বামী শহিদুল ইসলাম। স্বামী চলে যাবার পর তিন শিশুসন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন রশিদা। শুরু হয় বেঁচে থাকার সংগ্রাম। প্রতিবন্ধী এই নারী নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁঠাকাটা বাজারের বাসিন্দা।

রশিদা বেগমের বাবা ছলিম উদ্দিন ব্যাপারিও এ অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তিনি পেশায় ছিলেন ফেরিওয়ালা। জীবিকার তাগিদে একসময় পাঁঠাকাটা বাজারে এসে ভাড়াঘরে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে বাজারের ২৬৮ নম্বর দাগে ১০ শতক সরকারি সম্পত্তি লীজ নেন তিনি। বাবার লীজকৃত সেই সম্পত্তিতে ছোট্ট একটি খুপড়িঘরে মা ও তিন সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী এই রশিদা বেগম।

কিন্তু রশিদার বাবা ছলিম উদ্দিনের লীজকৃত ১০ শতক জমির মধ্যে দখলে রয়েছে মাত্র ২ শতকের মতো। অবশিষ্ট জমি শক্তি আর ক্ষমতাবলে দখল করে নিয়েছেন রশিদার প্রতিবেশি সফাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পাঁঠাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি আব্দুল মান্নান। বিএনপির এই নেতা প্রতিবন্ধীর সম্পত্তি দখল করে রাস্তার সামনে নির্মাণ করেছেন মার্কেট। টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়েছেন অবশিষ্ট জমিও।

ভুক্তভোগী রশিদা বেগম জানান, গত ১৪ এপ্রিল বিএনপিনেতা আব্দুল মান্নান তার জমিতে টিনের বেড়া লাগানোর সময় বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় ভর্তি হন মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ১৭ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাবার লীজকৃত জমি উদ্ধারে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায় বিচার থেকে বারবারই বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি।

প্রতিবন্ধী এই নারী আফসোস করে বলেন, বিএনপিনেতা আব্দুল মান্নান পাঁঠাকাটা বাজারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি। বাজারের লোকজন তাকে সমীহ করে চলেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না। বিভিন্ন দপ্তর থেকে ঘটনাস্থল তদন্তে এলে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। সাক্ষী দিতেও ভয় পান। টাকা ও ক্ষমতার জোরে বারবারই তিনি পার পেয়ে যান।

অসহায় এই নারী বলেন, আমি শারিরীক প্রতিবন্ধী। কাজ করতে পারি না। নিজের কোন জমিজমা নেই। বাবার লীজকৃত ১০ শতক সম্পত্তিই সম্বল। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও পাঁঠাকাটা হাট ঝাঁড়– দিয়ে যা পাই তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চলে। বড়ছেলে আকাশ অভাবের তাড়নায় বাজারের একটি চায়ের দোকানে কাজ করে। মেজোছেলে চাঁদ ৬ষ্ঠ শ্রেণি ও শাহিন ৪র্খ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অবুঝ তিন শিশুসন্তান নিয়ে চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন এই নারী। বিএনপিনেতা মান্নানের রোষানল থেকে তিন শিশুসন্তান নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তা কামনা করেন প্রতিবন্ধী রশিদা বেগম।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপিনেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বাজারের ২৬৮ নম্বর দাগে তিনিও ৯ শতক সরকারি সম্পত্তি লীজ নিয়েছেন। সেই জমিতেই মার্কেট নির্মাণ করেন। প্রতিবন্ধীর কোন সম্পত্তি দখল করেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন, প্রতিবন্ধী নারী রশিদা বেগম নওগাঁ জেলা প্রশাসক স্যারের নিকট একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। সেই অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএস/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২১)