আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হলেও বরিশালের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী বা শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত আগৈলঝাড়া উপজেলার ধান কেনা শুরু হয়নি। ধান চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানেন না কবে নাগাদ ধান বা চাল ক্রয় শুরু হবে। 

সূত্র মতে, কৃষি বান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সারাদেশে সরকারীভাবে ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ২৮ এপ্রিল খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ধান ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।

সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ২৭টাকা কেজি দরে প্রতি মন ধান ১হাজার ৮০টাকা হিসেবে সারাদেশে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্টিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার।

অন্যদিকে মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪০টাকা কেজি দরে প্রতি মন ১৬শ টাকায় ১০লাখ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৯টাকা কেজি দরে প্রতি মন ১৫শ ৬০ টাকায় ১শ ৫০মেট্টিক টন আতপ চাল কেনার কথা রয়েছ সরকারের।

উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম বলেন, ধান ক্রয়ের বিষয় নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর বা কৃষি অফিস থেকে তার সাথে কেউ যোগাযোগ করে নি। তাই কবে নাগাদ ধান ক্রয় শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় জানান, খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তাকেও কিছু জানানো হয়নি। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে তার অফিস থেকে সরকারী গোডাউনে ধান বিক্রির জন্য প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরীর কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন তিনি।

খাদ্য অধিদপ্তরের দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ঠ এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১হাজার ৪শ ৬১ মেট্টিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষমাত্রার কোন চিঠি এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন- কি ভাবে প্রকৃত চাষীদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে সে বিষয়েও কোন সুনির্দ্দিষ্ট নীতিমালা জানা যায়নি। তবে সরকারের কৃষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিটিং করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তালিকা প্রণয়নের কাজ করবেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, উপজেলায় ৯ হাজার ৪শ ৫০হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষ করা হয়েছ। উপজেলায় ইরি বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি হাইব্রীড ধানের ফলন হয়েছে ৮মেট্টিক টন এবং উফসী ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৬ মেট্টিক টন। যা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে।

এদিকে এ বছর উপজেলায় ইরি-বোরোর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দামে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছেন চাষীরা। উপজেলায় ২৬হাজার ৮০৪টি কৃষক পরিবার থাকলেও প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা সরকারী গোডাউনে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবেন কি না তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।

যবসেন গ্রারেমর কৃষক নূরে আলম পাইক জানান, বর্তমানে বাজারে ৮শ থেকে আড়ে ৮শ টাকা দরে ধান বিক্রি করছেন তারা। সরকারের কাছে তারা ধান বিক্রি করতে পারলে মন প্রতি ২শ ৮০ থেতে ৩শ টাকা বাজার মুর‌্যের চেয়ে বেশী পাবেন তারা। তাই তিনিসহ এলাকার চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

চাষীদের অভিযোগ, এলাকার কোন কোন জন প্রতিনিধিরা ধান বিক্রির তালিকা প্রণয়নের সুযোগ পেয়ে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের নাম বাদ রেখে তাদের নিজেদের পছন্দের লোক অথবা যারা কোন জমিই চাষ করে না তাদের নাম তালিকায় দিয়ে সেই চাষির নামের বিপরীতে নিজেরা নিজেদের হাজার হাজার মন ধান সরকারের কাছে বিক্রি করে সরকারের ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্র পুরণ করেন। ফলে বঞ্চিত হয়ে আসছেন প্রান্তিক চাষিরা। সরকারের কাছে ধান বিক্রির একটা সিন্ডিকেট তৈরী করেন প্রভাশালীরা

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের দাবি- তালিকা প্রনয়নে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা থাকলে তারা সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। তালিকা প্রণয়নে কারচুপি হলে সরকারের উদ্দেশ্য শতভাগ সফল হবে না বলে আশংকা প্রকাশ করছেন কৃষকেরা।

মাঠ পর্যায়ে গিয়ে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জবাবদিহিতার আওতায় থেকে জনসমক্ষে বসে প্রকৃত কৃষকেদের তালিকা প্রণয়নের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম জানান, মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে যে কৃষকরা মাঠে ধান ফলান তারাই তালিকায় স্থান পাবেন। চাষিদের স্বার্থে সরকারের মহত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কৃষি অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করবেন জানিয়ে তিনি নিজেও মনিটরিং করবেন বলে নিশ্চিত করেন।

(টিবি/এসপি/মে ০১, ২০২১)