শেখ এনামূল হক বিদ্যুৎ, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ের রসালো লিচুতে পাক ধরেছে। আগামী এক সপ্তাহ থেকে পনের দিনের মধ্যেই লিচু পুরোদমে বাজারে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাগান মালিকরা। 

এবার প্রচন্ড খরা, কিন্তু সময়মত ঝড়-বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় লিচুর গঠনে কোন পরিপূর্ণতা আসেনি। তবে খরার কারনে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান তারা। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অধিকাংশ লিচু বাগানী ও ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতিতে লিচুর উপযুক্ত দাম পাওয়া ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কিত তারা। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। করোনার কারণে লিচুর বাজার এবার কেমন হবে তারা আঁচ করতে পারছেন না এখনো।

সোনারগাঁওয়ের লিচু,বাজারে আগাম আসে বলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লিচুর তুলনায় সোনারগাঁওয়ে লিচু বাগানী ও ব্যবসায়ীরা বেঁচা বিক্রিতে বেশ সুবিধা করতে পারেন। আগাম লিচুর চাহিদাও থাকে একটু বেশি। সুস্বাদুু সুমিষ্ট হিসেবে সোনারগাঁওয়ের লিচুর কদর বেশ আগে থেকেই।

বিভিন্ন লিচু বাগানে সরেজমিনে ঘুরে দেখে যায়, এখন বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লিচু ঝুলছে। ঝাঁকড়া গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট এই ফলের গুচ্ছ দেখতে বেশ মনোরম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বাগান। বাদুড় ও কাকের উপদ্রপ থেকে বাঁচতে তারা গাছের চূড়ায় ইলেক্সটিক বাতি, পলিথিন কাগজ, বাস ও টিনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের বাজনায় (ঠাঠা) রশি লাগিয়ে বাগানের ভেতরে বানানো ঘর থেকে শব্দের মাধ্যমে তাদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কাজে তাদের পরিবারের সদস্যরাও সহযোগিতা করছে। অনেক ব্যবসায়ী লিচু গাছ থেকে লিচু ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য টুকরি, বাঁশ, রসি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি বা সংগ্রহ করছে।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে,সোনারগাঁ পৌরসভার, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া,বারদী,সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভার সরদার বাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, দুলালপুর, বাড়ী মজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, গোবিন্দপুর, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ,গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ইছাপাড়া, চিলারবাগ, কৃষ্ণপুরা, হাঁড়িয়া, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া ও ভট্টপুর এলাকায় উৎকৃষ্টমানের লিচুর চাষ হয়। সোনারগাঁওয়ের লিচু রঙে ও স্বাদে অতুলনীয়।

লিচু বাগানীরা জানায়, সোনারগাঁওয়ে বর্তমানে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি এই পাঁচ ধরনের লিচুর ফলন হয়ে থাকে। তবে কদমী লিচু ফলনের প্রতি বাগানীরা মনোযোগী বেশি। প্রতি বছর এক একটি বাগান তিন চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই জমির মালিক সেখানে কদমী লিচুর গাছ লাগায় বা বাগান তৈরি করে। আগে সাধারণত শৌখিনতার বসে বাড়ির আশপাশে লিচু গাছ লাগানো হতো। এখন তা বাণিজ্যিকভাবে নিচু জমি ভরাট করে লিচু বাগান তৈরি করা হচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় ও কৃষি জমির পাশেও লিচুর চাষ করছেন অনেকেই। লিচুর মধ্যে সবার আগে বাদামি (পাতি) লিচু পাকে। এর পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য লিচু পাকতে শুরু করে। স্বাদে ও রসে পাতির লিচুর কদর রয়েছে বেশ। সোনারগাঁয়ে ছোটবড় মিলিয়ে তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানের বেশির ভাগেই কদমী লিচুর চাষ হয়।

লিচু বাগানীরা জানান, সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন প্রজাতির লিচুর চাষ হলেও কদমী লিচুর চাষে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। তারা বলেন,প্রথমে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। লিচুর চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা লিচু গাছ লাগাচ্ছে।

ব্যাবসায়ীরা বলেন আমরা লিচুর ফলন না দেখেই বাগান মালিকের কাছ থেকে তা ক্রয় করে থাকি। লিচু ব্যবসায়ীরা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে লিচু ব্যবসা করে থাকে। তবে এবারে করোনার জন্য আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। দাম ভালো না পেলে লোকসান গুনতে হবে।

স্থানীয়রা জানায়, অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি। সবার আগে এই লিচু বাজারে আসে তাই চাহিদা থাকে একটু বেশি। তবে এবার কতটুকু চাহিদা বা দাম থাকবে তা বলা মুশকিল।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, সোনারগাঁওয়ে লিচু পাকার জন্য চাষিরা কোনো রাসানিক দ্রব্য প্রয়োগ করে না। তবে লিচু বড় হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোন জাতীয় ওষুধ, লিচুর রঙ নষ্ট না হওয়ার জন্য ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য তারা কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুল ইসলাম জানান,সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়। এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। করোনার কারণে ব্যাবসায়ীরা যাতে লিচু হাটে-বাজারে নিতে অসুবিধার সম্মুখীন না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

(এ/এসপি/মে ০২, ২০২১)