অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে রোগীদের চিকিৎসা হবে কিভাবে? হাসপাতাল নিজেই তো অসুস্থ!

অপরিচ্ছন্ন দুর্গন্ধ নোংরা আর ময়লাতে ভরা পাথরঘাটার ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি। এমন অবস্থার মধ্য দিয়েই এক ধরনের নামমাত্র চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন কতৃপক্ষ। এমন দুর্দশা দেখার যেনো কেউ নেই।

সিড়ির ভাঁজে ভাঁজে পানের পিক। থু থু আর কফ্ লেপ্টে আছে। ময়লার ভাঙা বালতিটি একমাত্র ডাস্টবিন। ডায়রিয়ার রোগীদের বেডের নিচে গামলা গামল পচা ময়লা । অপসারনের করার মতো পরিচ্ছন্ন কর্মি নেই। নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত বেডসীড। জানালায় নিক্ষেপ করা পানের পিক‌‌ আর সর্দি কাশি শুকিয়ে আছে। আর এই হাসপাতালের টয়লেট যেন নরক যন্ত্রণার জাতাকল।

প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে রোগমুক্তির আশায় এই হাসপাতালে ভর্তি হছে মহামারী ডায়রিয়ার রোগীরা। ডায়রিয়ার রোগীদের ভিরে অন্যান্য রোগীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর এই ভোগান্তি আর কবে শেষ হবে?। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়ে আর নোংরা এবং দূরগন্ধময় অপরিচ্ছন্ন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুচিকিৎসা তবে কি চিরনির্বাসনে গেছে? এমন প্রশ্ন সূধীমহলের।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প:‌ কর্মকর্তা মো.আবুল ফাতাহ বলেন, কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ৩জন ডেপুটিশনে সহ মোট রয়েছে ১৩ জন। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,এই উপজলায় আমার অধিনে সর্বমোট ১২২টি পদের মধ্যে রয়েছে এক-তৃতীয়াংশ ।

তথ্য সংগ্রহকালে ওই হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, তাদের সংকট এবং দুর্ভোগের কথা। এখানে ২৩ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১৩জন।

অপর আর এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, এখানে সিনিয়র নার্স ২০ জন থাকার কথা কিন্তু আছে ১০ জন।
এই জনবল দিয়ে নার্সদের রোগীর সেবা দেয়া এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে বলে বলেন তারা।

পরিচ্ছন্ন কর্মী রাবেয়া আক্তার বলেন, এই হাসপাতালে খাবার পানির রয়েছে তীব্র সংকট।

হাসপাতলে ভর্তি হওয়া রোগী ঘুটাবাছা'র বশির আকন বলেন, এই পরিবেশে রোগমুক্তির আশা করা যায়না।

কালমেঘা ইউনিয়নের হাফেজ ফেরদৌস ক্ষোভের সঙ্গে জানান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দুর্ব্যবহারের কথা। (৩/৫/২১)সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার ভাগ্নি মুন্নি আক্তারকে রিলিজ করে নিয়ে আসেন।

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডঃ জাবির হোসেন বলেন, কোভিট করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে হাসপাতালে এমন অবস্থা কাম্য নয়। আশা করি কর্তৃপক্ষ অচিরেই এই দুর্ভোগ লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, এই করোনা মহামারী বিপর্যায়কালে পাথরঘাটার একমাত্র হাসপাতালটির এমন দুরবস্থা কাম্য নয়। আশা করব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টির ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপকূলে ছড়িয়ে পড়া ডায়রিয়া পেটের পীড়াসহ মহামারীর কবলে পাথরঘাটা সহ আশেপাশের এলাকার রোগীরা।হাসপাতাল থেকে মানুষ রোগমুক্তির আশা করে। অথচ এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি রোগমুক্তি পরিবর্তে আরো রোগীদের নতুন করে আক্রান্ত করছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায় পাথরঘাটা সহ আশেপাশের এলাকাবাসী।

(এটি/এসপি/মে ০৩, ২০২১)