বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাশের ভারনী টহল ফাঁড়ি এলাকার বনে লাগা আগুন ২৩ ঘন্টাও নিয়ন্ত্রনে আসেনি। সোমবার সকাল ১১ টায় লাগা আগুন আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায়ও জ্বলছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় পাঁচ একর বনভুমিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। 

বনের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়া এই আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ করা শরণখোলা মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দূর্গম বনের ভিতর ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ টেনেও ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারেনি। এরপর রাতের কারনে আগুন নেভানোর পাইপ টানার কাজ বন্ধ করে আজ সকালে লোকালয় থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অন্যরা।

তবে রাতে বৃষ্টি হওয়ায় কারনে আগুন বিক্ষিপ্ত ভাবে এখনও জ¦লছে। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক মো. সরোয়ার হোসেন সুন্দরবন থেকে মুঠোফোনে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এই আগুন লাগার কারন অনুসন্ধ্যানে সুন্দরবন বিভাগের গঠিত ৩ সদস্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন। এই কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৫ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৮০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা,লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

দ্বিতীয় দিন আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়া দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের আফজাল চাপরাশি রেজাউল, সালাম ও সুমন বলেন, সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা শতাধিক গ্রামবাসী সেখানে ছুটে এসেছি। আমরা বাড়ি থেকে কলসি, বালতি, জগ ও হাড়ি নিয়ে পাশের ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে একদল গ্রাবাসী আগুন নিভাতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্য একটি দল আগুন যাতে সুন্দরবনের সব দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন (আগুনের অংশের মাটি আলাদা করা) কাটার কাজ করছি। মরা ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দুরত্ব অনেক। দূরে হওয়ায় পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে অন্য কোন পানির উৎস নেই। যার কারনে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাদের ধারনা।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক মো. সরোয়ার হোসেন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনের দ্বিতীয় দিনে কাজ শুরু করেছে। আগুন লাগার যায়গাটা বেশ দূর্গম বনের ৪ কিলোমিটার মধ্যে হওয়ায় পানি বেশ খানিকা দূরে। আমাদের কর্মীরা আগুন নেভাতে পানির পাইপ টানার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। পানির পাইপ টানার কাজ শেষ হলে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করা হবে। আশাকারা হচ্ছে আজ দিনের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রনে আসবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে ফাঁড়ির অদূরে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পায় বনকর্মীরা। তারা সেখানে যেয়ে দেখে কোথাও কোথাও ধোঁয়ার কুন্ডলি আবার কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। এই বনে বলা, গেওয়া ও লতাগুল্ম জাতীয় গাছপালা রয়েছে। আগুনের খবর স্থানীয়দের জানানো হলে তারা আমাদের সাথে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুনের বিস্তৃতি যাতে সব এলাকায় ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেজন্য স্থানীয়দের নিয়ে একদিকে পানি ছিটানো হচ্ছে অন্যদিকে ফায়ার লাইন কাটার কাজ চলছে। জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারন করছি। তবে কতটুকু এলাকায় আগুন ছড়িয়ে কি ধরনের গাছপালা পুড়ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণ করে জানানো হবে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/মে ০৪, ২০২১)