চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে একদল কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় একই পরিবারের তিন সহোদর গুরুতর আহত হয়েছেন।

সোমবার (০৩ মে) গভীর রাতে উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

রাতেই বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীতব্রত পাল জানিয়েছেন, কর্ণফুলী থেকে মারামারির ঘটনায় আহত অবস্থায় মো. ইউসুফ (৩৪), মো. ইসহাক (৩২) ও মো. ইলিয়াছ (৩০) নামে তিন ভাইকে আনা হয়। তাদের দুজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক। মেডিক্যোলের সার্জারি বিভাগে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'

ঘটনাসূত্রে ও এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত আহম্মেদ হোসেনের বাড়িতে ডাব চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সমাধানে ঘটনাটি মিটমাট হয়ে যায় । কিন্তু কিশোরদের একটি অংশ বিপক্ষ দলকে শায়েস্তা করার জন্য গোপনে ০৫নং ওয়ার্ডের কিশোর গ্যাংদের সাথে আতাঁত করে। শুধুমাত্র ডাব চুরির ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে নেয় এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে কিশোর গ্যাং গ্রুপ অতর্কিত অবস্থায় ইউনুছ সওদাগরের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা চালিয়ে তাঁর তিন ছেলেকে আহত করেন। পরে তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পালিয়ে যায়।

ঐদিন রাতেই একই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চরলক্ষ্যা ৯নং ওয়ার্ডের মোঃ সাইফ (২৭) নামে আরেক এক যুবককে মারধর করেন বলে খবর পাওয়া যায়।

এদিকে, চমেক হাসপাতালে চিকিৎসারত মো. ইলিয়াছ (৩০) বলেন, ডাব চুরির ঘটনার সাথে আমাদের সম্পর্ক নাই। যারা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে তাদের নাম না জানলেও সবার চেহারা গুলো চিনি। এদের কিছুলোক আমাদের এলাকার। আর কিছু বাহিরের কিশোর। এরা সবাই গ্যাং বেধে আসল ৭০-৮০ জন মতো হবে। যেভাবে আসল; মনেহয় ওরা আমাদের মেরে ফেলার জন্য হামলা করেছে।'

এলাকার লোকজন জানায়, উপজেলায় নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে এই কিশোর গ্যাং কালচার। জানা গেছে, এসব গ্যাং কালচারে যারা জড়িত তারা ছিনতাই, লুটপাট, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, খুন ও যৌন হয়রানিসহ ভয়ংকর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ছুরি, চাপাতি, রামদা, হকিস্টিক ছাড়াও তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র।

এসব কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এমন অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের হাতে নানাভাবে নিরীহ লোকজন নির্যাতিত হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

কর্ণফুলীতে এসব কিশোরদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি শুধু অভিভাবকদের নয়, রাষ্ট্রের জন্য ও চিন্তার বিষয়। যারা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা যে একদিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কী!

ওদিকে, ইউনুছ সওদাগর বাড়ির লোকজন জানান, এই ঘটনায় আমরা খুব আতঙ্কিত ও মর্মাহত। কেননা এরা তিন ভাই কোন ধরনের ডাব চুরি কিংবা সংঘটিত কোন ঘটনার সাথে জড়িত নয়। এরপরেও কেন কি কারণে কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা এদের উপর হামলা চালিয়েছে বুঝিনা।’

এই ঘটনায় গত ৯ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত থানায় কোন ধরনের মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর (৫ নং ওয়ার্ড) এক কিশোরীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ বছরের কিশোর বোরহান উদ্দিন সোহানকে ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর আহত হন।

(জেজে/এসপি/মে ০৪, ২০২১)