রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পরকীয়া প্রেমের কারণে এক দিনমজুরকে গলায় ডিশ লাইনের তার পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ সাতক্ষীরা সদরের বকচরা গ্রামের আফছার আলীর পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে আটক করেছে।

নিহতের নাম আলমগীর হোসেন (২২)। তিনি সাতক্ষীরা সদরের বকচরা পশ্চিমপাড়ার মোঃ নজরুল ইসলামের ছেলে।
আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিয়াডাঙা গ্রামের হাফিজুল ইসলামের ছেলে ইসরাফিল (২১) ও একই গ্রামের নাজিরউদ্দিন সরদারের ছেলে আব্দুল জলিল (২৬)।

বকচরা গ্রামের সুফিয়া খাতুন জানান, তার ছেলে আলমগীর হোসেন একজন দিন মজুর। সদর উপজেলার পদ্মশাঁখরা গ্রাম থেকে কয়েক বছর আগে বাপের বাড়ির পাশে তিন কাঠা জমি কিনে সেখানে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন তারা।

তিনি আরো জানান, বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী আছিয়ার দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আলমগীর। রাত বেশী হওয়ায় ও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তিনিসহ স্বজনরা আলমগীরকে খুঁজতে বের হন। শুক্রবার ভোর সাপড়ে ৫টার দিকে একই গ্রামের আফছার আলী তার পুকুরে যেয়ে একটি মৃতদেহ উপুড় অবস্থায় ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে পুকুর পাড়ে পড়ে থাকা জুতা দেখে লাশটি তার ছেলে আলমগীরের বলে সনাক্ত করেন। নিহতের গলায় ও মুখের মধ্যে ডিস লাইনের তার পেচানো ছিল। তাকে তার দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।

আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙা ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সামছুর রহমান জানান, পরকীয়া নিয়ে তাদের গ্রামের ভাটা শ্রমিক আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী এক সন্তানের জননী ময়নার সঙ্গে চরম বিরোধ দেখা দিলে তিনি শালিসের সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে জলিলের শ্বশুড়ি এসে মেয়েকে তার বাড়ি রামনগরে নিয়ে যায়। ঈদের পরে এ নিয়ে বসাবসি ছিল। শুক্রবার সকালে তিনি খবর পান যে জলিলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে বকচরার আলমগীরকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

রামনগর গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, তার মেয়ে ময়না বাড়ি থেকে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর বেরিয়ে গেলেও শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মেরেনি তার সন্ধান।

ইউপি সদস্য শাহাদাৎ হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য বিলকিস পারভিন জানান, আলমগীরের সঙ্গে বালিয়াডাঙার এক মহিলার পরকীয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

তবে নিহতের বড় ভাই কুমিল্লায় পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কর্মরত মহিবুল্লাহ মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামের জনৈক আব্দুল জলিলের স্ত্রীর পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে বিরোধও হয়েছে কয়েক বার। ধারণা করা হচ্ছে পরকীয়ার জেরে তার ভাইকে শ্ব্সারোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক মিনহাজউদ্দিন জানান, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে আলমগীরের লাশ বকচরা গ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ডিস লাইনের তার গলায় পেচিয়ে মুখের সঙ্গে বেঁধে আলমগীরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার কারণ জানার চেষ্টা চলছে। লাশের ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আব্দুল জলিল ও ইসরাফিল নামের দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ০৭, ২০২১)