স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ১৩৭ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এর আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নির্দেশনা উপেক্ষা করে জামাতার চাকরি স্থায়ী করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে কোনো নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করেননি ভিসি সোবহান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অর্ধশতাধিক শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ইউজিসির তদন্তে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের ২৫ টি অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সকল প্রকার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

১২ ডিসেম্বর ৫০৩তম সিন্ডিকেট সভায় ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ ইনস্টিউিটে একজন ও ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসে দুইজনকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও নির্দেশনাটি ১০ ডিসেম্বর মেইলে পেয়েছিলেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এটি স্বীকারও করেছেন তিনি।

এরপর ১৩ ডিসেম্বর এক নির্দেশনায় ভিসির জামাতা ও মেয়ের নিয়োগ বাতিল করতে বলা হয়। এছাড়া রেজিস্ট্রার এম এ বারীকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশনা ছিল। তবে তার কোনোটিই পালন করেন নি উপাচার্য। উল্টো ৫০৫ তম সিন্ডিকেটে জামাতার চাকরি স্থায়ী করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তার দুর্নীতির বিষয়টি ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। যদি সেই সময়ে ব্যবস্থাটা নেয়া যেতো তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে রাজনৈতিক নিয়োগ হয়েছে বলে তার সহযোগীরা দাবি করছে। তবে প্রায় ১৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৪০ জনের মতো ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বাকি ১০০ জনকে চাকরি দেয়া তার অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা ছিল বলে মনে করছি। তাতে সহযোগিতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা। এমনকি তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও চাকরি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এক্রাম উল্লাহ বলেন, এটা অবৈধ ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়। তবে নিয়োগ যদি বাতিল করা না হয় তাহলে বিএনপি আমলে দেয়া আলোচিত ৫৪৪ নিয়োগের এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোঝা হয়ে থাকবে।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য বৃহস্পতিবার (৬ মে) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।

শনিবার (৮ মে) পৌনে ১১টার দিকে কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তার সঙ্গে রয়েছেন, কমিটির সদস্য এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান। তবে এটিকে লোক দেখানো তদন্ত কমিটি বলে দাবি করছেন শিক্ষকদের অনেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, উপাচার্যের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি আগেও হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে এবার দেখার বিষয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেও নিয়োগ দেয়ার পর এই নিয়োগগুলোর ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ৫ মে উপাচার্যের স্বাক্ষরে শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ১৯ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

(ওএস/এসপি/মে ০৮, ২০২১)