স্টাফ রিপোর্টার : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উত্তরণে বৈষম্য-অসমতা দূর করতে ‘শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বায়ন নয় দেশজায়ন’ এর পক্ষে মত দেন আলোচকরা।

শনিবার (৮ মে) দুপুর ২টায় ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয় থেকে এ ওয়েব সেমিনার পরিচালিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি অর্থনীতি সমিতির ইউটিউব এবং ফেইসবুকে পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণাগ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার এ অষ্টম পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হান্নান। সভা সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক ড. মো. লিয়াকত হোসেন মোড়ল।

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এ বইটা কেবল অধ্যাপক আবুল বারকাতের পক্ষেই লেখায় সম্ভব, এতে তার মৌলিক ধারণা বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের নানা চিন্তার যোগান দিচ্ছে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে।”

“কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বিশ্বায়ন বিষয়টা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। করোনাভাইরাস যে বিস্তৃত হয়েছে এটা বিশ্বায়নেরই ফলাফল। সারা বিশ্বে এটা ছড়িয়ে পড়েছে। এর সমাধান খুঁজতে গেলেও বিশ্বায়নেরই নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হয়। কিন্তু ভ্যাকসিনের পেটেন্ট ও লাইসেন্স যদি উন্মুক্ত করা যেতো আমাদের মতো দেশগুলো নিজেরাই টিকা উৎপাদন করতে পারতো।”

“অধ্যাপক বারকাত তার লেখায় তিনটি জিনিস এনেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্বায়নের সম্পৃক্ততা ও চ্যানেলগুলো নিয়ে। আলোচনায় এসেছে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া আমাদের দেশে কেমন অভিঘাত এনেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের মতো বিশ্বায়নের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা।”

কোভিড-১৯ প্রাকৃতিক প্রতিশোধ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, “মহাবন আমাজন থেকে শুরু করে সুন্দরবন ধ্বংস করে চলেছে বিশ্বায়নের অনুষঙ্গ। এ বিশ্বায়ন নিয়ে যুক্তনিষ্ঠ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও বিকল্প প্রস্তাবনার জন্য অধ্যাপক আবুল বারকাতকে আমাদের দল বাসদ এর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হান্নান অধ্যাপক আবুল বারকাতের বই থেকে উদ্ধৃতি করে বলেন, “বিশ্বায়ন দুর্ভাবনার বিষয়। ততোধিক দুর্ভাবনার বিষয় নব্য উদারবাদী বিশ্বায়ন। এমনও প্রশ্ন উঠেছে যে ভাইরাল মহামারী কি বিশ্বায়ন উদ্ভূত বিপর্যয়? একদিকে প্রচলিত বিশ্বায়নের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা আর অন্যদিকে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ পাল্টে দিচ্ছে বিশ্বায়নের চরিত্র।”

বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের কষ্টমূল্য বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসে শ্রমবাজারের সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারার অনুযোগ জানান তিনি। মহামারীতে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের উত্থান, কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধির হতাশার মধ্যে ‘শোভন সমাজের লক্ষ্যে বিশ্বায়নের বদলে দেশজায়নের’ কথা জানান তিনি।

সভার শুরুতে সম্প্রতি অধ্যাপক আবুল বারকাতের স্ত্রী শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সাহিদা আখতারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন আলোচক ও দর্শকরা।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, সহ সম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল ও সমিতির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মাজহার সরকার। আলোচনা শেষে শ্রোতা-দর্শক ও আলোচকরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। ৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পর্কে অভিনন্দনবাণী দিয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি। কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে আছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।

(পিআর/এসপি/মে ০৮, ২০২১)