স্টাফ রিপোর্টার : পশ্চিম জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদ চত্বরে ঢুকে ইসরায়েলি পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে নিহত এবং শত শত ফিলিস্তিনি আহতের ঘটনায় বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগরী শাখা।

বিক্ষোভ সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেন, ইসরায়েল ন্যাক্কারজনকভাবে ফিলিস্তিনের নামাজরত মানুষের ওপর হামলা করেছে। এমন বর্বর হামলার পরেও বিশ্ব সম্প্রদায় চুপ হয়ে আছে। জাতিসংঘও কিছু বলছে না।

তিনি বলেন, এই বর্বরতার অবসান হওয়া দরকার। ইসরায়েল তাদের সম্প্রসারণ নীতি দিয়ে গাজা উপত্যকায় বসতি গড়ে তোলে। প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর তারা তাদের দখল কায়েম করছে। ইসরায়েলের দখলদার নীতি অব্যাহত থাকলেও এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় কিছুই বলছে না।

ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা উত্তরের সভাপতি ফজলে বারী মাসুদ বলেন, ইসরায়েল অভিশপ্ত জাতি। তাদের এ উগ্রবাদী আচরণ নতুন নয়। তারা ইসলামের অনেক নবীকেও হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি।

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব কাজী আতাউর রহমান বলেন, ‌‘ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এর জন্য ১৪ মে ঈদের দিন বেছে নেয়া হয়েছে। কারণ ৭৩ বছর আগে ওই রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিলিস্তিনরা যেমন প্রতি বছর এ দিনটা কালো দিবস হিসেবে পালন করে। এখন থেকে ইসলামী আন্দোলনও প্রতি বছর দিনটিকে কালো দিবস পালন করবে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, এ আন্দোলনে আমরা জান দেব, মাল দেব। বাংলাদেশ সরকারকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ অবস্থান নেয়ার আহবান জানাই। সময় এসেছে মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার। ইসলামকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে প্রাণ দিতে প্রস্তুত হতে হবে।

তারা বলেন, মুসলিম জাতি এক শরীর। কোথাও আঘাত করলে সবার প্রাণে আঘাত লাগে। আমাদের প্রাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এজন্য ঈদের দিন আমারা বাধ্য হয়ে সমবেত হয়েছি। আমরা সমগ্র বিশের মুসলমানরা এক হয়ে ইসরাইলকে বিচ্ছিন্ন করে দেব, ইনশাআল্লাহ।

বিক্ষোভ ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা অথবা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এর আগে বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ৭টায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে আরও চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে হাজারো মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শেষে খুতবা দেয়া হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত।

এদিকে বায়তুল মুকাররমে ঈদের সকাল ৯টায় জামাতে নামাজ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় ফিলিস্তিনে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। সেখানে যে অমানবিক অন্যায় অবিচার চলছে তা বন্ধ হোক।’

উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও শেখ জাররাহ এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উত্তেজনা চলছিল। গত সোমবার ভোররাত থেকে আল আকসা মসজিদে ঢুকে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে বহু ফিলিস্তিনি আহত হয়। এ সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনারা।

পবিত্র রমজানের জুমাতুল বিদা ও পবিত্র রাত শবে কদরেও আল আকসায় তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা এর প্রতিবাদ করে আসছেন। এর মধ্যেই গত সোমবার প্রতিশোধ হিসেবে হামাস ইসরায়েলের দিকে রকেট হামলা চালায়। তারপর থেকে অব্যাহত বিমান হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় এ পর্যন্ত ১০৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন শিশু ও ১১ জন নারী।

(ওএস/এসপি/মে ১৪, ২০২১)