রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি অধিক প্রচলিত রুশ কৌতুক ছিলো নিম্নরূপঃ
- এক ইহুদি মা তার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠানোর সময় বলছিলেন, 'বাবা যুদ্ধে গিয়ে বেশি পরিশ্রম করবি না, একটা করে তুর্কি মারবি আর একটু জিরিয়ে নিবি!'

ছেলে মা'র কথা শুনে বললো, 'ঠিক আছে মা, তবে ওরা যদি আমাকে মারে?'
ইহুদি মা আশ্চর্য হয়ে বললেন, 'তোকে কেন মারবে বোকা, তুই আবার কি করেছিস?'

যাহোক, অটোমান শাসনামলের পতনের পরে সে সম্রাজ্যের ভাগাভাগি ও তুর্কিদের অভ্যন্তরিণ নানা বিষয় নিয়ে বিশ্ব মোড়লরা কম খেলা খেলেননি। বিশ্ব মোড়লদের দেখাদেখি তুর্কিদের সাথে এমন তামাশা কাছের রাষ্ট্রও করেছেন। তুরস্ককে যাঁতাকলে রাখতে সেখানে ধ্বংসযোগ্য ও নোংরা রাজনীতি'র সেই খেলাধুলা কারোরই অজানা নয়। অথচ সেই তুরস্ক'ই আজ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে মধ্য-প্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী ইসলামিক পরাশক্তি'র নাম। আর তা খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছেন পশ্চিমারাসহ ইসলামের বড় বড় শত্রু'রা।

যাহোক, বর্তমান ফিলিস্তিন ইসূ্যতে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো যদি তুরস্কের পাশে থাকে, তাহলে ওই কথিত রুশ কৌতুকও পাল্টে যাবে নিমিশেই। দখলদার ইহুদীদের কালো থাবা থেকে হয়তো মুক্তি পাবে ফিলিস্তিনের আপাময় জনগণ।

ইসরায়েলকে থামাতে আজ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে ভুমিকা রাখছেন বা রাখতে যাচ্ছেন তাতে অবশ্যই মুসলিম বিশ্বের তাঁকে পুর্ণ সমর্থন জরুরী বলে মনে করছি। আশা করি, এখন তুরস্কের পাশে থাকবেন তাঁরা। ইহুদিদের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে এটি'র আর কোন বিকল্প পথ অবশিষ্ট নেই। এরদোগানকে হয়তো একদিন স্যালুট দিবে বিশ্ব যদি তাঁর নেতৃত্বেই মুক্ত হয় ফিলিস্তিনের ভুখন্ড। ধ্বংস হয় হিটলারের রেখে যাওয়া ইহুদিদের দীর্ঘ দিনের রক্তখেলা। এবং মুসলিম বিশ্বের সফলতায় নিঃসন্দেহে এটিই হবে, বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের মুখ কৌশলে বন্ধ রাখা ইসরায়েল নামক একটি বিশ্ব-বিষফোঁড়ার সফল অস্রপাচার।

বিশ্বে যারা রক্ত-মাংসে মানুষ তাঁদের কারোর পক্ষেই ইসরায়েল কতৃক ফিলিস্তিনের উপর চলমান বর্বরতা মেনে নেয়া সম্ভব না। তাইতো সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় জবগণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে। সচেতন বিশ্বের সবার সামনে একটাই প্রশ্ন, অবৈধ দখলদারদের হাতে আর কত জ্বলবে ফিলিস্তিন? আর কতো রক্ত-প্রাণে দখলমুক্ত হবে ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটি?

পরিশেষে বলতে চাই, হয়তো ফিলিস্তিনের মুসলমানদের রক্ত ও আর্তনাদ দেখে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মুসলিম পরিবারের মা তাঁর ছেলেকে যুদ্ধে পাঠানোর ভাবছেন। কাতার, লেবানন, ইরানসহ অনেক মুসলিমদেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ সেটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আর, কে বা জানেন ওইসব প্রতিবাদী সন্তানের মা'য়েরা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো সন্তানদের ইসরায়েলর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার আদেশ দিবেন। এবং বিদায় বেলায় তাঁর ছেলেকে বলবেন-- "বাবা হয় মরবি, না হয় ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করে আসবি!" কোন কোন মা হয়তো রুশ কৌতুকটি মনে করে তাঁর সন্তানে বলবেন,

"বাবা শোন, যুদ্ধে গিয়ে বেশি পরিশ্রম করবিনা, একটা করে ইহুদি মারবি, আর একটু জিরিয়ে নিবি!"

লেখক : সাংবাদিক, কবি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।