চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যার হাফেজ নজির আহম্মেদ সড়কের বেহাল দশা। দেখার যেন কেউ নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার ও জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছার অভাবে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়ে গ্রামীণ সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীর।

বর্তমানে সড়কটি দেখলে আঁতকে উঠবে যে কেউ! গাড়ি চলাচল তো দ‚রের কথা, দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলাও। এসব প্রতি দিনকার চিত্র হলেও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে , স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সংস্কারের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কে। মধ্যম চরলক্ষ্যার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ নজির আহম্মেদ সড়কটির প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে খানাখন্দ বড় বড় গর্ত। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই।

প্রতিনিয়তই ঘটছে কোনো না কোনো দূর্ঘটনা। বিশেষ করে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও হাসপাতালে রোগীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ সড়কটি এখন নিজেই রোগী! বিকল্প সড়ক না থাকাতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনও।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কর্ণফুলী থানার পার্শ্ববর্তী মধ্যম চরলক্ষ্যা হাফেজ নজির আহম্মেদ সড়ক থেকে শুরু করে ৫নং ওয়ার্ডের অপরপ্রান্ত সেগুন বাগিচা পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ইট একটিও নেই জায়গা মতো। সব ইট আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদায় ডুবে। অথচ এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ। তাছাড়া সড়কটির হাসেম মেম্বার বাড়ি থেকে বোর্ড বাজার ও মইজ্জারটেক যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। বিকল্প সড়ক না থাকাতে ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।

জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্বেও সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশ বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি, সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিয়ে কিভাবে সামনের নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন জনপ্রতিনিধিরা!

সড়কের এ বেহাল দশা নিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর জামান আরিফ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভাই উপজেলার কতো রাস্তাই তো ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা ঠিক হচ্ছে না কেন, বলতে পারি না? হাফেজ নজির আহম্মেদ সড়কটির করুণ দশা। বলতে গেলে পুরো রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাওয়াত দিয়ে পরিদর্শন করালেও এই রাস্তাটিতে এখনও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া পড়েনি।’

টানা দুই মেয়াদেরও বেশি সময় ধরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ আলী। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছেন না। এটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা ও ‘অযোগ্যতা’ বলে দাবি করেছেন অনেকেই।

চরলক্ষ্যার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে নতুন সড়ক হয়নি বললেই চলে। সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। কিছু এলাকার বাসিন্দারা সড়ক সংস্কারের দাবিতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ এই সড়কটিতে ২০০৫ সালে এলজিইডির অর্থায়নে ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক সংস্কার করা হয়। ঐ সময় এ সড়কের হাশেম মেম্বার বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ ফুট এলাকায় ‘হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) ইট বিছানো হয়েছিল। পরে ২০১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে পুরো সড়কে সিঙ্গেল ইট বসিয়েছিল। এরমধ্যে গত ৯ কিংবা ১৬ বছরে এ সড়কের কোন সংস্কার করা হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পটিয়া উপজেলার অধীনে থাকতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারেরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ পেতো কিন্তু এখন পান না। কারণ উপজেলা পরিষদ এডিপি বরাদ্দের অর্ধেক টাকা নিজেরা কেটে রেখে দেন। পরে নিজেদের পছন্দসই লোক দিয়ে সড়কের কাজ করান। ফলে সমবন্টন ও উপজেলার সাথে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়হীনতার অভাবে পুরো উপজেলায় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।’

এদিকে, কর্ণফুলী উপজেলায় রাস্তার ঠিকাদারি কাজ করা একাধিক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন প্রোপাইটর নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আমাদেও তথ্যমতে এই উপজেলার রাজস্ব খাতে এখনও বিগত দুই অর্থ বছরের (২০১৯-২০ ও ২০২০-২১) টাকা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে না পারায় অলস পড়ে রয়েছে।

সর্বশেষ সবেমাত্র ১৮-১৯ অর্থ বছরের কিছু টেন্ডার প্রক্রিয়া করেছেন। বাকী টাকা রিকুষ্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এসব কাজ করতে কোন ধরনের প্রকল্প তালিকা তৈরি করা হয় না। এমনকি ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ কোন সড়কের চাহিদা প্রকল্প নেয়া হয় না। যার ফলে কর্ণফুলীর অধিকাংশ রাস্তাঘাটের করুন দশা কোনক্রমেই কাটছে না।

চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সড়কটির বিষয়ে আমরা প্রকল্প জমা দিয়েছি। ঢাকায় স্টিম পাঠানো হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে অফিসের কিছু লোকজন বদলি হওয়াতে কোন অবস্থায় আছে; তাও জানতে পারছি না। বিষয়টি আমার চেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ভালো জানবেন। আপনি উনার সাথে একটু কথা বলুন।’

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘তিন বছর আগে আমরা এমপি’র বরাদ্দ থেকে আয়ুব বিবি থ্রিতে পাঁচ ইউনিয়নের ৫টি সড়ক প্রসেসর দিয়েছিলাম। চরপাথরঘাটার বাংলাবাজার হাফেজ মনির আহম্মেদ সড়ক, চরলক্ষ্যাতে হাফেজ নজির আহম্মেদ সড়ক, বড়উঠানে হামিদ আলী খাঁন সড়ক, শিকলবাহাতে চর হাজারী সড়ক, জুলধাতে একে কাদের সড়ক। গত বছর টেন্ডার হবার কথা ছিল। সম্ভবত করোনাকালে তা আটকে গেছে। কবে নাগাদ হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ সেটা আমি। এসব সড়কের জন্য দুই বছর আগে মন্ত্রী মহোদয় ডিও দিয়েছিলেন।’

(জেজে/এসপি/মে ২১, ২০২১)