ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : লিচু চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি। লিচু পাড়া, বাছাই করা, ঝুড়িতে সাজানো, ট্রাকে তোলা—সব মিলিয়ে চারদিকে যেন চলছে এক উৎসব। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাজারে এসেছে টসটসে লিচু। তবে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এবার লিচুর ফলন কমেছে । গত কয়েক দিনে ঘন ঘন শিলাবৃষ্টিতে লিচু ফেটে ঝরে গেছে বলে জানালেন চাষীরা । 

সচরাচর দেশী জাতের লিচুর গাছ রয়েছে এই জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে। । হাল আমলে এখন এখানে চাষ হয় চায়না–থ্রি, বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি জাতের লিচু।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলায় ৩৬৩ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান ও বসতবাড়ির উঠান ও বাগান মিলিয়ে জেলায় লিচু আবাদ হয়েছে

জেলায় নানা জাতের লিচুর চাষ হলেও এখন বাজারে চলতি সপ্তাহে আসছে মাদ্রাজি, বেদানা ও বোম্বাই জাতের লিচু। মাদ্রাজি জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। বেদানা জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে মাদ্রাজি লিচু খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি ১৮০–৩২০ টাকা। বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি সাড়ে ৪৫০–৭০০ টাকা। আর বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০–৪৫০ টাকায়।

চাষিদের কাছ থেকে লিচু কিনে আড়তে আনতে শুরু করেছেন পাইকারেরা। লিচু ভরা হচ্ছে খাঁচায়।

নীলফামারী সদর উপজেলার কাঞ্চন পাড়ার লিচুচাষি জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, ২৫ একর জমিতে ৮০০ গাছ নিয়ে লিচুবাগান তাঁর। গত বছরের তুলনায় এবার ৬০ শতাংশ গাছে মুকুলই আসেনি। তবে গত বছর যেখানে মাদ্রাজি লিচু ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার শুরুতেই সেই লিচু প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

সদর উপজেলার রামগঞ্জ এলাকার লিচুচাষি দুলাল রায় বলেন, ১৫০টি গাছের বাগান তাঁর। সব মিলিয়ে বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু ফল এসেছে ৪২টি গাছে, তা–ও আবার ফলন কম। লিচুর আকারও এবার ছোট।
ঢাকা থেকে থেকে লিচু কিনতে এসেছেন সামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর লিচুর চাহিদা অনেক বেশি, সে তুলনায় বাজারে লিচু নেই।

এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে জানানো হয়, লিচুর ফলন কমে যাওয়ার পেছনে একটি নির্দিষ্ট কারণকে দায়ী করা যায় না। তিনি বলেন, লিচু পাড়ার সময় অনেকেই গাছের বড় বড় ডাল ভেঙে ফেলেন। সেই ঘাটতি পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগে। তা ছাড়া লিচুতে মুকুল আসার সময় শীত বেশি ছিল। ফলে পরাগায়ন ঠিকভাবে হয়নি। ফল যখন পুষ্ট হবে, সেই সময় ছিল প্রচণ্ড খরা। এ কারণে ফলের আকার ছোট হয়ে গেছে। আবার শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টি বেড়েছে, শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। ফলে লিচু ফেটে গেছে। সঠিক সময় সেচ না পাওয়ায় গৌণ খাদ্য উপাদান, যেমন ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, কপার, জিংক, আয়রন, বোরন—এসবেরও ঘাটতি রয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, । এবার লিচুর ফলন কম হলেও অর্থনৈতিক বিনিময়ে কোনো ঘাটতি হবে না, চাষিরা ভালো দাম পাবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অনাবৃষ্টির কারণে মাটি থেকে গাছের খাদ্য সংগ্রহ বিঘ্নিত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারই লিচুর এমন ফলন বিপর্যয় হয়েছে।

(কে/এসপি/মে ২৫, ২০২১)