রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : এক রাতেই ঝলসে গেছে ৫৪ কৃষকের স্বপ্ন ।ক্ষতিগ্রস্থ ধান খেত থেকে ফসল পাবেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। পাচ্ছেন না ক্ষতিপূরণের কোনো ভরসাও ।এখন তারা  খেতে গিয়ে  অঝোরে কাঁদছেন৷ ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউপির বনগাঁও এলাকায়। ঐ এলাকায় কেউ জমি বর্গা নিয়ে কেউ বা আবার ঋণ মাহাজন করে প্রায় দেড়শত বিঘা জমি চাষাবাদ করেন। 

সেখানকার ‘বি আর বি ব্রিকস’নামের একটি ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও গরম গ্যাসে ঐ এলাকার ৫৪ কৃষকের প্রায় ৭০ বিঘা জমির ধান ঝলসে নষ্ট হয়ে গেছে । নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে আরও অন্তত ৫০ বিঘা জমির ধানসহ আমের বাগান ও অন্যান্য সবজির খেত।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনা পরিদর্শনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি প্রীতম সাহা ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়েছিলেন। পরির্দশন করে আসার পর ইউএনও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন খাকায়। বিষয়টি আর প্রশাসনিকভাবে সেভাবে অগ্রসর হয়নি।

কৃষক সোলেমান আব্দুর রশিদ এনামুলসহ একাধিক ব্যক্তি জানান,গত শনিবার রাতে হঠাৎ ওই ইটভাটার আগুন নেভানো হয়। এর কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে তাঁদের জমির ধানের শীষসহ গাছ ঝলছে হলদে হয়ে গেছে।ঝলছে যাওয়া ধান থেকে কোনো ফসল পাওয়া যাবেনা বলে আশঙ্কা তাঁদের। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি চুক্তি নিয়ে এবং রাসায়নিক দোকানগুলো থেকে বাকীতে কীটনাশক নিয়ে আবাদ করেছিলেন তারা। কিন্তু খেত পুড়ে যাওয়ায় এখন ঋণের টাকা আর রাসায়নিক দোকানের বাকী কিভাবে শোধ করবেন ,তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই কৃষকেরা।

কৃষক সাদেক আবুল জবিবর বলেন, এবার জমিত ধানের ফলন ভালই হয়েছিল। জমিতে তুলনামুলক ফলন ভালো পাওয়া যেতো। ওই জমিগুলো থেকে বিঘা প্রতি কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ মণ ধান পাওয়া যেত। এর মধ্যে আবার উন্নত জাতের ধানগুলো বিঘা প্রতি ৩০ মণ পযর্ন্ত পাওয়া যেত। কিন্তুক ইটভাটায় হামার কোমর ভাঙ্গি গেইছে।এলা হামার সংসার চলিবে ক্যামন করি। এত ঋণ মাহাজন সুধিমো কেমনে করি?

ক্ষতিগ্রস্থ সুলতান বেলায়েত কৃষক বলেন,বালাই হইলে,পোকায় খাইলেও কিছু ধান পাওয়া যায়। ভাটায় যেইভাবে মারচে, তাতে জমির সব ধান পুড়ে গেইছে। এ্যালা খ্যাতোত বসে কান্দা ছাড়া কোন উপায় নাই হামার।
অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ খেত পরিদর্শনে যান কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.সাদেকুল ইসলাম। পরিদর্শনের পর তিনি জানান, ধান খেতের ওপর দিয়ে ইটভাটার গরম গ্যাস প্রবাহিত হওয়ার ফলে তা ঝলসে গিয়েছে ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ গতকাল শুক্রবার জানান, অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।তার প্রতিবেদন পেলেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নেব।তিনি বলেন,ইটভাটা স্থাপনের আগে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। বনগাঁও গ্রামের ওই ইটভাটাটি স্থাপনের সময় তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয় নি। আইন অমান্য করে কৃষি জমির মাঝখানে ভাটা স্থাপন করার কারণে প্রতিবছর ওই এলাকার কয়েকটি ভাটায় আশেপাশের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক আহাম্মদ হোসেন বিপ্লব বলেন,এই ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া অনেক উঁচু দিয়ে বের হয়ে যায়।ফলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। অন্য কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।এরপরও ভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হলে, বিষয়টি দেখা হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমাদের কেউ অবগত করেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অব্যশই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের পাশে সর্বদায় প্রশাসন থাকবে।

(কেএস/এসপি/জুন ০৪, ২০২১)