স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের চরম দৃষ্টিকটু ও অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ নিয়ে নানা কথা চলছে। ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে সাকিব এখন নিন্দিত। সারা দেশে সমালোচনার ঝড়, ভক্তরাও বিব্রত।

ম্যাচে তার দল মোহামেডান ৫ বছর পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে জিতলেও সাকিবের ঘটনায় পুরো আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। তিন ম্যাচ টানা জয়ের পর আবার সমান খেলায় হেরে হারের বৃত্তে আটকে পরা সাদা-কালোরা শুক্রবার আকাশি-হলুদদের বিপক্ষে জয়ের আনন্দ করার চেয়ে সাকিবের বিপক্ষে কি ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন হয়-তা নিয়েই চিন্তিত, তটস্থ।

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আজ সারাদিন মোহামেডান ভক্ত থেকে শুরু করে সাকিব সমর্থক ও সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগী সবার একটাই কৌতুহলি প্রশ্ন-কী সাজা হবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের?

একবার উইকেটে লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা, পরের বার উইকেট উপড়ে তুলে আছাড় দেয়া, আবার শেরে বাংলার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সামনে আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়া-সব মিলিয়ে সাকিব ইস্যুটা আসলে একটু বেশি গাঢ় হয়ে গেছে। যদিও শুক্রবার সন্ধ্যার পরপর নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত সাকিব দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন।

ক্ষমা চাওয়ার মত উদারতা দেখিয়ে সাকিব প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এটা নিছক আবেগতাড়িত ঘটনা। মুশফিকুর রহীমের বিপক্ষে লেগবিফোর উইকেটের জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সাকিব উইকেটে লাথি মেরে বসেন এবং আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপনের সাথে বচসায় লিপ্ত হন।

পরে বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই আকাশ কালো দেখে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করে দিলে ফের মেজাজ বিগড়ে যায় সাকিবের। দৌড়ে এসে তখন উইকেট তুলে আছাড় মারেন। হোম অব ক্রিকেটে দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ তারকার এমন ন্যাক্কারজনক আচরণ তার ক্যারিয়ারে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

এখন সবার অপেক্ষা, আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপন কি রিপোর্ট দেন এবং তার প্রেক্ষিতে ম্যাচ রেফারি মোর্শেদ চৌধুরী কি সিদ্ধান্ত নেন। সবার আগে খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে, সাকিবের বিপক্ষে আম্পায়ার কি ধরনের অভিযোগ পেশ করেন।

প্রথমত, সাকিব যা করেছেন, প্রকাশ্যেই করেছেন। মাঠে উপস্থিত দুই দলের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি, সাংবাদিক ও বোর্ড, সিসিডিএম কর্মকর্তা সবাই দেখেছেন সেটা।

তবে লাথি মেরে উইকেট ভাঙা আর পরেরবার উইকেট ওপরে ফেলা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অন্যায়ের ঘটনা ঘটেনি। সাকিব আম্পায়ারের গায়ে হাত তোলা কিংবা আম্পায়ারকে ধাক্কা অথবা লাঞ্চিত করেননি। তাই তার বিপক্ষে আচরণবিধির ‘লেভেল ফোর’ অভিযোগ আনা কঠিন।

আইনে আছে- আম্পায়ারকে শারীরিকভাবে নাজেহাল, প্রহার বা লাঞ্চিত করলে তার বিপক্ষে লেভেল ৪-এ অভিযোগ আনা যাবে। সেটা খুবই কঠিন আইন। শাস্তিও কঠিন। ন্যুনতম ৫ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা আর সঙ্গে আর্থিক জরিমানা। এর চেয়ে বড় কিছুও হতে পারে।

তবে যেহেতু সাকিব তা করেননি। আম্পায়ারের সাথে তার শারীরিক স্পর্শের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই সাকিবের বিপক্ষে ‘লেভেল থ্রি’ অথবা ‘লেভেল টু’তে অভিযোগ আনতে পারেন আম্পায়ার। লেভেল ২-এর শাস্তি হলো এক থেকে দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা আর অর্থ জরিমানা। আর লেভেল ৩-এর শাস্তি হলো ৩ থেকে ৪ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।

আজ বিকেল গড়াতেই ক্রিকেট পাড়ায় মৃদু গুঞ্জন, সাকিবের বিরুদ্ধে লেভেল ৩-এ অভিযোগ আনা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে তার চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মোহামেডান ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিসিডিএম সহসভাপতি মাসুদুজ্জামান-এর উদ্ধৃতি দিয়ে এমন সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে যে, সাকিবকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করার খবর তিনি শুনেছেন।

এ খবরে ক্রিকেট পাড়ায় ধারণা জন্মেছে, সাকিব বুঝি সত্যিই চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বা ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম) থেকে এমন কোন বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়নি।

তাহলে এ সংবাদের ভিত্তি কী? সাকিব সত্যিই কি চার ম্যাচ নিষিদ্ধ? তা জানতে সিসিডিএম, ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

তবে মোহামেডান ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান আজ (শনিবার) বিকেলে মুঠোফোনে বলেছেন, ‘আসলে আমার বক্তব্যটা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি বলিনি যে সাকিবকে ৪ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি বলেছি যে আম্পায়ার্স কমিটি নাকি সাকিবের এ আচরণের জন্য লেভেল ৩‘তে অভিযোগ এনেছেন। সেই লেভেল থ্রি আইনে আছে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।’

এখন বিসিবি, সিসিডিএম আম্পায়ার্স কমিটির দাবি মেনে চার ম্যাচের জন্য সাকিবকে শাস্তি দিয়ে ফেলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘না, না। আমরা মানে মোহামেডান ক্লাব এ বিষয়ে কিছুই জানি না। সিসিডিএম, বিসিবি ও ম্যাচ রেফারি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানাননি আমাদের।’

মাসুদুজ্জামান আরও জানান, ‘আসলে আম্পায়ার সাকিবের বিপক্ষে লেভেল থ্রি না টু; কোন আইনে অভিযোগ এনেছেন, সেটা আমরা জানি না। আমাদের তা জানানোও হয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্তের।’

(ওএস/এসপি/জুন ১২, ২০২১)