এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের ৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে বরাদ্দের অর্ধেকই লুটপাট হয়েছে বলে দাবি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের। জেলা কালচারাল কর্মকর্তা ২০১৯ সনে এ প্রকল্প শেষ হবার প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। কিন্তু তিনিই এখন বলছেন এ কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়নি। যা প্রকল্প কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। এদিকে এ বিড়াট অংকের কাজ না করে বিল উত্তোলনে সহায়তা করতে কালচারাল কর্মকর্তার প্রত্যয়ন দেয়ায় চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে  একটি গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে বলে গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।

গণপূর্ত সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ঝালকাঠি শিল্পকলা একাডেমী ভবন উদ্বোধন করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নতুন সংস্কার ও মেরামতের জন্য ৬ কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার ৯শত ৭৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৭ সনের ৫ জানুয়ারী তারিখ ঠিকাদারদের এই কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ৫ জন ঠিকাদার কাজে অংশ নেয়। ২০১৯ সনের ২৯ ডিসেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল কর্মকর্তা দরপত্রের শর্ত ও নির্দেশনানুযায়ী এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে প্রত্যয়ন দেন।

বছর যেতেই ভবনের রং ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভিন্ন ফ্লোরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ষ্টেজ এর কাঠ ভেঙ্গে পড়েছে, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক কাজ করায় লাইট ফ্যান অকেজো হয়ে গেছে। গার্ড রুম, প্রধান গেটের অংশ ভেঙ্গে বিকল পড়ে আছে। বাথ রুমের দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। সাইন বোর্ডে লাইটগুলো নষ্ট। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, এসি, সাবষ্টেশন, সাউন্ড সিষ্টেম ও প্রজেক্টর, আসবাবপত্র, অডিটরিয়ামের চেয়ার, সোলারসহ নিম্নমানের দেয়া হয়েছে। পানির লাইন নষ্ট হয়ে গেছে। শিল্পকলা একডেমীর মূল কেচি গেটাটি খোলা হয়নি ১১ বছরেও। মরিচিকা পড়ে গেট নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। সংস্কারের নামে এ ভবনের পুরানো মূল্যবান মালামাল আত্মসাৎ করারও অভিযোগ করেছে শিল্পীরা। এসব অনিয়মের ছবি তোলার সময় শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল কর্মকর্তা বাঁধা দিয়ে বলেন জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে।

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিল বলেন, ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সাজাতে উল্লেখিত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করে লুটপাট করা হয়েছে। তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঝালকাঠির জেলা আওয়ামীলীরে সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. মোনোয়ার হোসেন খান বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজ থেকে কুসংস্কার ও জঙ্গীবাদ দূর করতে এবং যুব সমাজকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবনকে নতুন করে সাজাতে বিড়াট অংকের এই বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ না করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ব্যাহত হবে। এর তদন্ত করে ব্যবস্থানেয়া উচিত বলে মনে করি।

উল্লেখিত কাজের একাংশের ঠিকাদার নাহার এন্টারপ্রাইজের সমির চক্রবর্তি জানান, আমাদের কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। তাই কাজ বুঝে নেয়ার সময় গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং নির্মান সামগ্রীর মান ভাল বলে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। এ বিষয়ে ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী। তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় দেবনাথ জানান, তার দায়িত্বে এ প্রকল্পের সিভিল, স্যানেটারী ও বৈদ্যুতিক কাজ হয়েছে। যা তিনি সঠিক ভাবে বুঝে নিয়েছেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার আল মামুন বলেন, প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কাজে ত্রুটির কথা জানিয়ে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কাজ শেষ হবার পর প্রত্যয়নপত্র দিয়ে এখন অনিয়ম বা ত্রুটির কথা বলছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এস/এসপি/জুন ১৩, ২০২১)