শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : সহকর্মী, আপনজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে শেষ বিদায় নিলেন,দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক তিস্তা'র সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক এবং এডভোকেট আলহাজ্ব মো.মিজানুর রহমান লুলু ভাই। আজ তাঁকে চির শয়িত করা হয়েছে পারিবারিক গোরস্থানে।

সদা হাস্যমুখ, মিষ্টিভাষী, বিনয়ী এবং ক্ষুরাধার লেখনীর এই কলম সৈনিককে অনেকেই লুলু ভাই হিসেবেই সম্বোধন করতেন। দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত দৈনিক তিস্তার সম্পাদক এডভোকেট আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান লুলু চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত ৩ টায় ঢাকা এভার কেয়ার হাসাপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
( ইন্না-----রাজেউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৭৪) বছর।

দৈনিক তিস্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ ওয়াহেদুল আলম আটিষ্ট জানায়, গত ১৯ এপ্রিল আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান লুলু কনোরায় আক্রান্ত হলে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে থেকে করোনা জয় করে সুস্থ্য হয়ে তিনি শহরের বালুবাড়ী বাসায় চলে আসেন। এরপর আবার শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে তাকে দিনাজপুর জিয়াহাট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসাচ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১ মে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে যোগে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে এভার কেয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করা হয় । পরে সুস্থ্য হয়ে উঠলে ১৬ মে ছেলে সামস্ শাহরিয়ারের ঢাকাস্থ উত্তরায় ৩ নং সেক্টরের ৮ নং রোর্ডের ৮ বাসায় গিয়ে ওঠে।সেখানেই তিনি অবস্থান করছিলেন। এরপর আবারো অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ৩০ মে পুনরায় তাকে এভার কেয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ জুন সুস্থ্য হয়ে আবারো ছেলের বাসায় ফিরেন। আবার ১১ জুন শ্বাঃস কষ্ট জনিত কারণে এভার কেয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ব্রেথিং লাইফ সাপোর্ট(কৃত্রিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করার যন্ত্র)দিতে রাখা হয়। ১২ জুন শনিবার দিবাগত রাত ৩ টায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

প্রবীণ এই সম্পাদক দিনাজপুর সদর উপজেলার ৫ নং শশরা ইউনিয়নের পাঁচবাড়ী গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম এ্যাড. শামসুদ্দিন আহম্মেদ দিনাজপুর সদর উপজেলার প্রথম গ্রাজুয়েট ছিলেন।

সম্পাদক মিজানুর রহমান লুলু দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ালেখা শেষে করাচি থেকে এমএ পাশ করেন। পরে তিনি “ল” পাশ করে নিজেকে তিনি আইন পেশার সঙ্গে সম্পৃত্ত করেন। তিনি এপিপিও ছিলেন। তিনি দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর আইন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, দিনাজপুর প্রেসকাবের একাধিক বার সভাপতি ছিলেন। পরে প্রেস কাব বিভক্ত হলে বিভক্ত দিনাজপুর প্রেসকাবের সভাপতি হিসাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক তিস্তার বয়স ৪০ বছর।

এছাড়াও তিনি দিনাজপুর চেম্বার চেম্বার অব কমার্সের সাবেক নির্বাহি সদস্য, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক নির্বাহী সদস্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, নবরুপীর সাবেক সেক্রেটারি, বালুবাড়ী জামে মসজিদের সেক্রেটারী, দিনাজপুর ইনষ্টিটিউটের সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

মরহুমের মরদেহ দিনাজপুরে এসে পৌছানোর পর দিনাজপুর আইনজীবী সমিতি,নীমতলা প্রেসক্লাব,দিনাজপুর ইন্সটিটিউট এ তৃতীয় দফা জানাযা নামাজ পর তাঁকে গ্রামের বাড়ী পাঁচবাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৪ র্থ দফা জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

(এস/এসপি/জুন ১৩, ২০২১)