স্টাফ রিপোর্টার : মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতির বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় যে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে তা সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল বলে অভিমত ব্যক্ত করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বলেছেন, যারা অতিরিক্ত অপরাধে লিপ্ত তারাই অত:পর তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ধর্মের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে চান!

আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের বুঝা উচিত গার্ড অব অনার ও জানাযা এক বিষয় নয়। ইসলাম ধর্মমতে কোনো পুরুষের জানাযায় কোনো নারী অংশগ্রহণ করতে পারেন না, সে-মোতাবেক মৃত কোনো পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাযায় কোনো নারী কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন না, তবে জানাযা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কবরস্থিত করার পূর্বে রাষ্ট্রীয় প্রথানুযায়ী তাঁকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান কোনোমতেই ধর্মের অবমাননা হতে পারে না। যারা তাতে ধর্মের দোহাই দিচ্ছেন, তারা মনে হয় 'ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম' এ চেতনায় আচ্ছন্ন!

আবীর আহাদ বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। 'নারী নেতৃত্ব হারাম' এ ইসলামী বিধান বাংলাদেশে প্রজোয্য নয় বিধায় দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে নারীরা সমহিমায় নিয়োজিত রয়েছেন। 'নারী নেতৃত্ব হারাম এ ইসলামী বিধানকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা যদি ফরজ জ্ঞান করে থাকেন, তাহলে তারা প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব নারী অবস্থান করছেন তাদের ওপরও ইসলামী বিধান প্রতিপালনের আদেশ জারি করে 'নারী নেতৃত্ব হারাম' এ ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করুক! তাদের এ জাতীয় ঘোষণায় মনে হয় তারা জামায়াত ও হেফাজতের ফতোয়া বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন !

আবীর আহাদ স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের একপ্রকার বন্ধুত্বের বন্ধনের ইংগীত দিয়ে বলেন, সেই বন্ধুত্বের পরশে পরশিত ও নিজেদের কৃত অতিঅপরাধ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ধর্মের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে সরকারি দলের এসব অতিপণ্ডিত বকধার্মিক ব্যক্তিবর্গ যে এ জাতীয় বেসামাল আচরণ করছেন তা সহজেই অনুমেয় ! মূলত: যে বা যারা যা নন, তিনি বা তারা যদি তা-ই হন, বা তাদেরকে বিশেষ কোনো স্বার্থে কেউ অন্যায়ভাবে সুবিধা দেন, তখন সে বা তারা হিতাহিতবোধশূন্য হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেন! বিশেষ করে শাজাহান খানের পূর্বাপর দানবীয় আচরণ আওয়ামী লীগ ও সরকারকে কতো যে নাকানিচোবানি খাইয়ে আসছে, তাতে আওয়ামী নেতৃত্ব কী কারণে তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন তা বোধগম্য নয়।

পরিশেষে আবীর আহাদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তায় আপত্তি উত্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ওপর আঘাত হানার দায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

(বিজ্ঞপ্তি/এসপি/জুন ১৪, ২০২১)