শোভন সাহা : ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এক সময় বছরজুড়ে কোনো না কোনো ফল পাওয়া যেত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন আর সেসব ফলের দেখা মেলে না। 'মধুমাস' খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাসে নির্দিষ্ট কিছু ফল আম, কাঁঠাল আর লিচুর দেখা মিললেও দেশের মানুষকে বছরের বাকিটা সময় নির্ভর করতে হয় বিদেশি ফলের ।

এমন পরিস্থিতিতে বছরজুড়ে ফল পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার বেশি করে ফল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পুষ্টিগুণ, বীজ ও চারার সহজলভ্যতা বিবেচনায় ১০টি বিদেশি ফল চাষকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে- রাম্বুটান, চেরি, ড্রাগন ফল, মাল্টা, থাই সফেদা, পার্সিমন, ম্যাংগোস্টিন, অ্যাভোকাডো, খাটো জাতের নারিকেল ও আরবি খেজুর। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার পর সদস্যরা মতামত দেবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন।

বৈঠকের কার্যপত্রে ১০টি ফল সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

রাম্বুটান : অত্যন্ত রসালো এ ফলটির উৎপত্তি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি রাম্বুটান-১ নামে একটি জাত মুক্ত করেছে। দেশে রাম্বুটানের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

চেরি : ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফলটি শীতপ্রধান দেশের। সম্প্রতি হিউস্টন, ইউএসএ থেকে সংগৃহীত একটি চেরি জার্মপ্লাজম উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এর বৃদ্ধি ও ফলন এবং গুণগত মান ভালো। এটি বছরজুড়ে ফল দেয়। শিগগিরই দেশে চাষের জন্য জাত হিসেবে মুক্ত করা হবে।

পার্সিমন : অপূর্ব ও মাজাদার এ ফলটির উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ায়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি, সি, ই, কে এবং খণিজ পদার্থ বিশেষত ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম এবং জিংক আছে। এ ফলটি পাঁচ বছর আগে দেশে এনে উপযোগী কৃষক পর্যায়ে ও হর্টিকালচার সেন্টারে বাগান সৃষ্টি করা হয়। এসব গাছে ফল ধরা শুরু হয়েছে।

অ্যাভোকেডো : বিশ্বে মানুষের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে অ্যাভোকেডো। মধ্য আমেরিকায় এর উৎপত্তি। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে রয়েছে ২৬ ভাগ ফ্যাট। ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী একটি গাছে ৩০০ থেকে ৪০০ ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলের ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। শিগগিরই এটিকে জাত হিসেবে মুক্ত করা হবে। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার উঁচু ভূমিতে এই ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ড্রাগন ফল : এ ফলটি মেক্সিকো, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি ড্রাগন ফল-১ নামে একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। এই ফলের শাঁস গোলাপি রঙের। এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি রয়েছে। মে থেকে নভেম্বর সাত মাসজুড়ে ফলটি উৎপাদন সম্ভব। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের স্বাদ ও মিষ্টতা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

ম্যাংগোস্টিন : এটি গাব প্রজাতির ফল। অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিদেশি এ ফলের চারা কয়েকজন চাষির বাগানে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

মাল্টা : ৫-৭ বছর ধরে এর চাষ দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বারি কর্তৃক অবমুক্ত করা মাল্টা ফলের গায়ের রঙ সবুজ। এ জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অস্ট্রেলিয়া থেকে উন্নত জাত এনে চাষের উদ্যোগ নিয়েছে।

থাই সফেদা : দেশি সফেদার জাতগুলো তেমন উন্নতমানের নয়। বর্তমানে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে কিছু উন্নত জাতের সফেদা এনে চাষ শুরু হয়েছে। এই ফলে বীজ কম, খাওয়ার উপযোগী অংশ বেশি এবং রোপণের পরের বছর থেকেই ফল দেওয়া শুরু হয়। এর সম্প্রসারণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খাটো ও হাইব্রিড জাতের নারিকেল : বাংলাদেশের প্রচলিত নারিকেল গাছের জাতগুলো লম্বা জাতের, ফলনও তুলনামূলক কম। বিশ্বের সব উপকূলীয় দেশে এখন খাটো এবং হাইব্রিড জাতের নারিকেল চাষ হয়। খাটো ও হাইব্রিড জাতের নারিকেল চাষের সুফল পাওয়ার জন্য দু'বছর ধরে ভিয়েতনামি দুটি খাটো জাত এবং ভারতের একটি উন্নত হাইব্রিড জাতের নারিকেল চারা আমদানি করে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরবি খেজুর : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরকারিভাবে এই প্রথম আরব দেশ থেকে উন্নত জাতের খেজুর কলম আমদানি করে বিভিন্ন জেলার হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে এবং চাষি পর্যায়ে বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে।

(এস/এসপি/জুন ১৪, ২০২১)