কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : মাচায় মাচায় ঝুলছে সবজি। দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু। চাষে ঝামেলা কম, ফলন বেশি। এবার বাজার ভালো, তাই লাভও বেশী। ফলে গ্রীষ্মকালীন সবজি শসা, কাঁকরোল, ঝিংগা, চিচিংগা উৎপাদন ও বিক্রি করে সাফল্য অর্জন করেছেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কৃষকরা। করোনার এই দু:সময়ে সবজি চাষে লাভবান হওয়াই খুশি কৃষক ও তার পরিবার। 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর উপজেলার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লোহাজুরী, জালালপুর ও মসুয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব এলাকার জমিতে ঢেঁড়স, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, শসা, কুমড়া, পুঁইশাক, ঝিংগাসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি চাষ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, শীতকালীন সবজির তুলনায় গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে ঝুঁকি বেশী। রয়েছে অতি বৃষ্টি, অতি খরা, রোগব্যাধির মতো নানা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও যথেষ্ট ভালো। শসা, কাঁকরোল, ঝিংগা, চিচিংগা কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করতে পারছেন। এই সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি পাইকাররা জমি থেকে কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।

বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বিকাশে নতুন নির্ণায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে।
উপজেলার চরঝাকালিয়া গ্রামের চাষী শহীদুল ইসলাম দুলাল (৩৫) জানান, তিনি ৪৪ শতক জমিতে ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে উফসী জাতের শসা, চিচিংগা ও কাঁকরোল চাষ করেছেন। ৪৫ দিন পর রমজান মাস থেকে জমি থেকে সবজি সংগ্রহ শুরু করেন। বাজারে প্রতি কেজি সবজি গড়ে ৩০-৩৫ টাকা পাইকারি বিক্রি করছেন। খরচের টাকা উঠার পরেও ১ লক্ষ টাকা লাভ করেছেন। তিনি জানান, জমিতে যে পরিমানে সবজি রয়েছে আরও ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলার ফেকামারা গ্রামের মাশুক মিয়া (৪৫) জানান, মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে ১৪ শতাংশ জমিতে তিনি কাঁকরোল চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার কাঁকরোল বিক্রি করেছেন। বর্তমানে যে বাজার দর আছে সে হিসাবে আরও ২০ হাজার টাকার কাঁকরোল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

লোহাজুরী ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কখন, কিভাবে জৈব সার ও জৈব বলাইনাশক ব্যবহার করতে হবে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মুকশেদুল হক বলেন, কম খরচে লাভ বেশী হওয়াই এই এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে গ্রীস্মকালীন সবজি চাষ বাড়ছে। সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকরা যাতে বাড়তি আয় করে সংসারে সুদিন ফেরাতে পারেন সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ, সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ।

(ডিডি/এসপি/জুন ১৪, ২০২১)