আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে এখন মাঠের পর মাঠ সোনালী আশ পাট সবুজে ভরপুর। জেলায় গত বছরের থেকে চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পাটের চাষ হয়েছে। এ বছর জেলার প্রতিটি উপজেলাতে পাটের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে চাষিরা।

তবে শুরুতে অধিক মাত্রায় খরার কারণে পাট চাষিদের যাইগা ভেদে ৩ বার জমিতে সেচ দিতে হয়েছে, যা কি না ব্যয় বহুল । বর্তমানে অধিক মাত্রায় বৃষ্টির কারণে পাটের শেষ বারের মত পরিচর্যা করতে পারছে না তারা।

এ বছর জেলার প্রতিটি এলাকায় পাটের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এখনো প্রায় মাস খানেক বাকি পাট কাটতে, তবে এখনি পাট গাছ প্রায় ৬-৭ ফুট লম্বা হয়েছে। যার অন্য তম কারণ চাষিরা নিজস্ব উদ্যোগে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে আগাম পাট বীজ বপন করেছে।

বাংলাদেশে সাধারণত দেশী পাট, তোষা পাট ও মেস্তা পাট এই তিন জাতের পাটের আবাদ হলেও বর্তমানে তোষা জাতের পাট জে, আর, ও -৫৪০ চাষ হয়৷ সাধারণত এটি ইন্ডিয়ান জাতে পাট, তবে কোম্পানি ভেদে এর নাম চাকা মার্কা, বেটা বিটি মার্কা, বঙ্কিম মার্কা এ ছাড়াও আরও অনেক নামে পাটের বিচি পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, রাজবাড়ীতে চলতি বছরে প্রায় ৪৮,০২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যার মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলাতে পাটের চাষ হয়েছে ১০,১৪০ হেক্টর জমিতে, পাংশা উপজেলায় চাষ হয়েছে ১১,৭০০ হেক্টর জমিতে, কালুখালি উপজেলায় ৯,৩৫০ হেক্টর জমিতে, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪,২৮০ হেক্টর জমিতে, সব থেকে বেশি চাষ হয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১২,৫৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি অফিস।

কয়েক জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর পাট চাষ করতে একাধিক বার সেচ দিতে হয়েছে জমিতে, কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেশির কারণে খরচ বেশি হয়েছে। তবে পাট পঁচানোর জন্য সময়মত পানি হলে এ বছর পাটের ফলন হবে আশাব্যঞ্জক।

তারা আরও বলেন, কৃষকেদের সাধারণত এক ফসল ঘরে উঠতে উঠতে অন্য ফসল মাঠে ফলানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তাই তারা ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তবে আমাদের দেশে সাধারণত মৌসুমে ফসলের দাম কম থাকে। এ সময় কৃষকেরা ভালো মূল্য পায় না, তারা ক্ষতি গ্রস্ত হয়।

গত বছর পাটের দাম মৌসুমে ১৫০০ থেকে ২০০০ হলেও তা বেড়ে ৫ হাজারের অধিক হয়ে ছিলো। তবে তা মজুদ ব্যাবসায়ীদের পকেটে গেছে বড় অংশ, এতে করে কৃষকের কোন লাভ হয় নি বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকের দাবী এ বছর যদি শুরুতে পাটের দাম ২৫০০ থেকে ৩০০০ হয় তাহলে চাষিরা লাভবান হবে। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকের অর্থসঙ্কটের সুযোগ নিতে পারবে না।

রাজবাড়ী জেলার বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলের পাটের আঁশের মান ভালো হওয়ায় মিল মালিকদের কাছে পাটের চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয় অন্যান্য অঞ্চলের পাটের থেকে এ জেলার পাটের দাম ও কিছুটা বেশি হয়।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া পাট চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া গত বছর পাটচষীরা পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর চাষীরা পাট চাষে আগ্রহী হয়েছে। এ বছর দাম ভালো পেলে কৃষকের উপকার হবে।

(একে/এসপি/জুন ১৫, ২০২১)