রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার চার বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামী মাহাফুজুর রহমান সাবু কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্তায় তার মৃত্যু হয়। মাহাফুজুর রহমান (৫৮) কলারোয়া উপজেলার ঝিকরা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।

ঝিকরা গ্রামের সৈকত হোসেন জানান, তার বাবা মাহাফুজুর রহমান ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট কলারোয়ায় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার চার্জশীট ভুক্ত ৫০ নং আসামী ছিলেন। উচ্চ ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা জনিত রোগে দীর্ঘদিন তিনি ভুগছিলেন। এসব কারণে তার দু’ চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। তাকে ভারতের ভেলোর ও কোলকাতায়ও নিয়ে যাওয়া হয়।

একপর্যায়ে জেলে থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ৪ ফেব্র“য়ারি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার একটি অংশে বাবার চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। একইসাথে একই মেয়দাদে কারাদণ্ড হয় তার চাচা সাজু’র। গত ২৫ মে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইকবাল কবীরের আদালত থেকে এ মামলার সাতজন আসামী জামিন পান। একই দিনে তার বাবা ও চাচাসহ ১১জনের জামিন শুনানীর জন্য ৩০ মে দিন ধার্য করা হয়।

তবে ২৭ মে সাতজনের জামিনাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজে আবেদন করেন। চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকী জামিনাদেশ স্থগিত করে ৩০ মে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানীর নির্দেশ দেন। ওই দিন প্রধান বিচারপতিরসহ পাঁচজনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানী শেষে চেম্বার জজ এর জামিন স্থগিতাদেশ করে অঅগামি ২০ জুন ক্রিমিনাল পিটিশন দাখিলের নির্দেশ দেন। ফলে তার বাবা, চাচাসহ ১১জন ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আরো কয়েকজনের জামিন শুনানী পিছিয়ে যায়।

সৈকত হোসেন দাবি করেন তার বাবা শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না। কলারোয়া যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে কলারোয়া পৌর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দু’ চোখে না দেখলেও আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার বাবার ভারতীয় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ি ঔষধ খেতে হতো। কিন্তু তিনি জেলে অবস্থান করায় ও করোনার কারণে ঔষধ সংগ্রহ করতে না পারায় সেবা শ্রুশ্রসা বিহীনভাবে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসাপাতালে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ বাড়িতে আনা হয়। বিকেল ৫টায় স্থানীয় মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে বাবার লাশ দাফন করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলর কামরুল ইসলাম জানান, মাহাফুজুর রহমান ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি জনিত রোগে ভুগছিলেন। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যায়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুন ১৫, ২০২১)