এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ১৯ জুন ১৯৭১। পাক হানাদার বাহিনী নিয়ে রাজাকাররা ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেশাইনখান গ্রাম ঘিরে ফেলে। তখন রাত ১১টা ৫৫ মিনিট। কারন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সকল দেশপ্রেমীদের ধরিয়ে পাক হানাদারদের কাছে তুলে দেয়া। হ্যান্ড মাইকে সতর্ক করে ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশী শুরু করে পাক সেনারা। সাথে এলাকার চিহ্নিত রাজাকার বাহিনী। গ্রাম থেকে মোট ১৭ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। 

ঝালকাঠির শহীদ মিনার মাঠে এনে তাদের ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। তাদের সাথে থাকা আমি মো. বেলায়েত হোসেন মানিক, রতনসহ ১৪ জনকে ঝালকাঠি থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে এনে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর ২১ জুন রাত ৩ টার দিকে ৬/৭ জন করে পানিতে নামানো হয়। পুড়াতন কলেজ এলাকায় নদীর পানিতে নামিয়ে গুলি করা হচ্ছে তাদের। আমিসহ অন্যদের যখন কোমর পানিতে নামিয়ে গুলি করা হলো সাথে সাথে পানিতে ঝাপ দিলাম। আগেই হাতের বাঁধন আধা খুলে রাখায় ভাসতে ভাসতে নদীর চরে এসে পড়ে থাকি। যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম তখন উলঙ্গ অবস্থায় নিজেকে আবিস্কার করলাম। এসময় স্পীট বোটে ব্রাশ ফায়ারের শব্দ লাইটের আলো সবই অনুভব করছি। ভোর বেলা এক কৃষক আমাকে উদ্ধার করে। আমার মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা এরকম। আপনি কিভাবে মুক্তি যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। এই সূর্য্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধা মো. বেলায়েত হোসেন তখন এভাবেই তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এরপর আমি ৪ মাস অসুস্থ্য অবস্থায় পালিয়ে ছিলাম। সুস্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে অংশ নেই। আমার পরিবারের ২ ভাই যুদ্ধে শহীদ হন। ১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ রাতে বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে সাভার নিয়ে পাকসেনারা মেরে ফেলে। ৪র্থ ভাই এনায়েত হোসেন পিলখানা থেকে পালিয়ে গ্রামে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেয়। তিনিও পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। আমার ঐ দুই ভাই পিলখানায় বিডিআরএ কর্মরত ছিল। আমি এই ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ভুক্ত হতে পারিনি। এটাই আমার দুঃখ। এখন আপনি কি চাচ্ছেন, আপনার সরকারের কাছে কি দাবি। উত্তরে বেলায়েত হোসেন বলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০১৭ ও ২০০২০ সনের যাচাই বাছাই কমিটির ‘ক’ তালিকায় আমার নাম আছে। ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেশাইনখাঁন গ্রামের সংগঠন ‘বিজয় বাংলা’ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সংবর্ধনা স্মারক দেয়া হয় আমাকে। এরপরেও আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি পেলাম না। বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের এই সরকারের কাছে আমার এটাই দাবি আমি যেন আমার জীবদ্দশায় স্বীকৃতি পেয়ে দেখে যেতে পারি।

(এস/এসপি/জুন ১৫, ২০২১)