স্টাফ রিপোর্টার : ‘ব্যাংক ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ বা ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাংক’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে ২০১৩ সালে যাত্রা করে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। যাত্রা শুরুর পর বছরে বছরে ব্যাংকটির সব সূচকে অগ্রগতি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বেড়ে আট বছরের ব্যবধানে এ ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার শতাংশ।

শুধু মুনাফা নয়; সম্পদ, বিনিয়োগ, আমানত, ঋণ বিতরণসহ সব সূচকেই উন্নতি করেছে ব্যাংকটি। এর সঙ্গে বড় হয়েছে ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ও কর্মী বাহিনী। তবে শাখার চেয়ে পরিধি বেড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কার্যক্রম শুরুর বছরই মুনাফার দেখা পায় মিডল্যান্ড ব্যাংক। প্রথম বছর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন মুনাফা করে তিন কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সঞ্চিতি ও কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়ায় এক কোটি ৮ লাখ টাকা।

আট বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফা করে ১২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সঞ্চিতি ও কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৬৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ আট বছরের ব্যবধানে সঞ্চিতি ও কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে ৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ৫৯৭৮ শতাংশ।

মুনাফায় এমন চমক দেখানো ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হারও বেশ কম। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের বছরগুলোতেও কম খেলাপি ঋণ দিয়েই পার করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ১ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি ঋণ ছিল মিডল্যান্ড ব্যাংকের।

ব্যাংকটির শাখার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে এর শাখা ছিল পাঁচটি। ধারাবাহিকভাবে শাখার সংখ্যা বেড়ে ২০২১ সালের মে মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৪টিতে।

প্রতিষ্ঠানটি এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করে ২০১৭ সালে। প্রথম বছর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সংখ্যা ছিল ৯টি, যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৭০টিতে দাঁড়িয়েছে।

মুনাফায় চমক দেখানো ব্যাংকটি আমানতকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে পণ্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে। শুরুর বছর আকর্ষণীয় ৯টি আমানত প্রকল্প নিয়ে আসার পর ধারাবাহিকভাবে আমানত প্রকল্প বেড়েছে। ২০২০ সালে ব্যাংকটির আকর্ষণীয় আমানত প্রকল্প দাঁড়ায় ২৪টিতে।

এর মধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এমডিবি স্কুল সেভার, যা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য। মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে এ হিসাব খোলা যায়। কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আছে কলেজ সেভার, যা ১৮ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা মাত্র ৫০০ টাকা জমা দিয়ে খুলতে পারেন। এ দুটি প্রকল্পই শুরু করা হয় ২০১৫ সালে।

এছাড়া এমডিবি সিপিপি সেভিংস, সুপার মান্থলি সেভিংস, ট্রাভেলার্স সেভিংস স্কিম, এমডিবি ডাবল বেনিফিট, এমডিবি ফ্যামিলি সাপোর্ট, এমডিবি কোটিপতিসহ বিভিন্ন মেয়াদি আমানত পণ্যও রয়েছে ব্যাংকটির। এতে প্রতি মাসে টাকা জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।

আমানত প্রকল্পে বৈচিত্র্য আনার সুফলও পেয়েছে ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে ব্যাংকটির আমানতকারীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৪৭২ জন। চলতি বছরের ২৩ মে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৯ হাজার ১২৬ জনে। এসব আমানতকারীর কাছ থেকে চার হাজার ৫৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার আমানত এসেছে।

আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি বিভিন্ন গ্রাহককে ঋণ হিসেবে দিয়েছে তিন হাজার ৬৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যাংকটিতে কাজ করছেন ৬৫৪ জন কর্মী, যা কার্যক্রম শুরুর বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে ছিল ১৫০ জন। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে কর্মীবাহিনীও বড় করেছে ব্যাংকটি।

সম্পদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কার্যক্রম শুরুর বছর মিডল্যান্ড ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৫৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ধারাবাহিকভাবে এই সম্পদ বেড়ে ২০২০ সালে ছয় হাজার ৩১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এসব সাফল্যের বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান-উজ জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মুনাফা করার চেয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টির ওপর বেশি জোর দিয়েছি। আর গ্রাহক সন্তুষ্ট করতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।’

(ওএস/এসপি/জুন ২০, ২০২১)