আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় ভাসছেন ইব্রাহিম রাইসি। এই ভূমিধস জয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক ও হামাস। শুধু শুভেচ্ছা নয় সমালোচনারও মুখোমুখি এই রক্ষণশীল নেতা। আগামী আগস্ট থেকে ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হবেন ৬০ বছর বয়সী রাইসি।

অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় রাইসি:

ফলাফল ঘোষণার পরই ইব্রাহিম রাইসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার তেহরান দূতাবাস থেকে জানানো হয় এ শুভেচ্ছা বার্তা। যেখানে আশা প্রকাশ করা হয় পরস্পর সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক।

রাইসির বিজয়ের পর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আশা প্রকাশ করেন রাইসির হাত ধরে তুরস্ক-ইরান সম্পর্ক আরও উন্নতির দিকে যাবে।

এক শুভেচ্ছা বার্তায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রেসিডেন্ট রাইসির আমলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

ইব্রাহিম রাইসির বিজয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দু’জনেই। দেশটির প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ আশা প্রকাশ করেন, ইরান ও দেশটির জনগণের সঙ্গে ইরাকের সম্পর্ক আগেও ভালো ছিল, নতুন প্রেসিডেন্টের আমলেও সে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। টেলিফোনে রাইসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল খাদেমি। পরে এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, আঞ্চলিক সন্ত্রাবাদ দমনে ইরানের সাথে কাজ করতে চায় ইরাক।

নির্বাচিত হওয়ার পর ইব্রাহিম রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইট বার্তায় মোদি বলেন, নতুন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ভারত-ইরান সম্পর্ক আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

রাইসির বিজয়ের কিছুক্ষণ পরই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এক টুইট বার্তায় ইমরান খান বলেন, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরানের সঙ্গে কাজ করতে চায় পাকিস্তান।

ইব্রাহিম রাইসির বিজয়ের পর শুভেচ্ছা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের হামাস। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেমি বলেন, ইরানের অন্যসব নির্বাচনের মতো এটিও ছিল গণতান্ত্রিক নির্বাচন। ইরান সবসময় হামাসের পাশে ছিল, সামনেও থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন কাসেমি। এছাড়া ভূমিধস জয়ে রাইসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ইয়েমেন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সমালোচনায় ইরানের ১৩তম প্রেসিডেন্ট রাইসি:

শুভেচ্ছার পাশাপাশি বহু সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইরানের এ নির্বাচনকে । সমালোচনাকারি দেশেগুলোর অন্যমত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট। দেশটির দাবি, ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। ইরানের জনগণ তাদের পছন্দের নেতাকে বাছাই করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তবুও ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, ইরানের এ যাবৎকালের সবচেয়ে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট হবেন ইব্রাহিম রাইসি। একই সঙ্গে রাইসিকে তেহরানের কশাই হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইসরায়েলের বিবৃতিতে।

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রাইসির বিজয়ের কয়েক ঘণ্টা না যেতেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যাতে বলা হয়েছে, ইরানের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত। যেগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। ২০১৮ সালে ইরানের ডেথ কমিশনে রাইসির ভূমিকার বিষয়ও উঠে আসে রিপোর্টে। যেখানে বলা হয় ডেথ কমিশন জোরপূর্বক ভিন্নমতাবলম্বী বহু রাজনীতিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল।

ইরানের এ নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির দাবি ইব্রাহিম রাইসি দমন ও কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন। একই সঙ্গে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাইসির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আল জাজিরা।

(ওএস/এসপি/জুন ২০, ২০২১)