মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশগামী কর্মীদের টিকা গ্রহণ বা টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করছে বিশ্বের অনেক দেশ। কিন্তু মোবাইলের ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে নিবন্ধন করা যাচ্ছে না। ফলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিদেশগামীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এমন কি দিনের পর দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা করোনার আইসোলেশন সেন্টারে ঘুরেও মিলছে না এর কোন সমাধান। ফলে ছুটিতে আসা বিদেশ ফেরত প্রবাসী এবং নতুন বিদেশগামীরা পড়েছেন বিপাকে।

এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করেও টিকা গ্রহণ বা নিবন্ধন করতে না পেরে হতাশায় ভূগছেন তারা। বিশেষ করে যাদের নির্ধারিত ছুটি শেষ হয়ে অতিরিক্ত সময় গড়াচ্ছে, তারাই পড়ছেন সবচেয়েও বেশি বিপাকে। সেই সঙ্গে নতুন বিদেশগামীদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ফলে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান না হলে অনেকেই আর্থিকভাবে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শুধু তাই নয়, ছুটিতে দেশে আসা বিদেশ ফেরত প্রাবাসীরা হারাবে কর্মস্থলের চাকুরি আর নতুন বিদেশগামীদের হবে ভিসা বাতিল। এমন দুঃশ্চিন্তায় ভূগছেন উপজেলার কয়েক’শ যুবক।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গেল ৬ মাসে নতুন এবং নতুন মেয়াদে পুরাতন পাসপোর্ট বই সংগ্রহকারীর সংখ্যা প্রায় ৬শ। এছাড়াও সৌদি আরব ও ইতালীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটিতে দেশে আসা বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের সংখ্যাও কম নয়। চলমান পরিস্থিতিতে বিদেশগামী কর্মীদের টিকা গ্রহণ বা টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করছে বিশ্বের অনেক দেশ। কিন্তু মোবাইলের ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে নিবন্ধন করা যাচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ফলে সমাজের বিশিষ্টজনদের দ্বারস্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। টিকার জন্য করছেন নানাভাবে তদবির। কিন্তু গেল এক মাসেও এর কোন সমাধান না হওয়া তারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

৩ মাসের ছুটিতে দেশে আসা পৌর শহরের জগন্নাথপুর গ্রামের যোবায়ের আহম্মেদ জানান, আরও এক মাস আগেই আমার ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু টিকা নিতে না পারায় কর্মস্থলে যেতে পারছি না। তার মতো শুধু জগন্নাথপুরেই অর্ধশত যুবক রয়েছে। তারা টিকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। কিন্তু টিকা নিতে পারছেন না।

নতুন করে সৌদী আরবে যাবার জন্য ভিসা নিয়েছেন উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ইদু মিয়া এবং শাহ জাহান মিয়া। ট্রাভেলস্ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত টিকা নিয়ে সার্টিফিকেট (সনদ) জমা দিতে হবে। তাছাড়া ভিসার মেয়াদও আর মাত্র কয়েক দিন রয়েছে। এখনো টিকার কোন ব্যবস্থা হয়নি। তাদের মতো অনেকেই এই জটিলতায় ভূগছে। বিদেশ যেতে পারছে না তারা। এছাড়াও টিকা নিতে প্রতিদিনই বিদেশগামীদের কেউ না কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন এবং হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশীদ আলম জানান, অবশেষে বিদেশ ফেরত প্রবাসী কিংবা বিদেশগামী কর্মীদের টিকার জটিলতা নিরসনে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত রোববার থেকে জেলা কর্মস্থান এবং জনশক্তি কার্যালয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে নিবন্ধন শেষে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই, বিদেশগামীরা পাসপোর্টসহ ভিসার সকল কাগজপত্র নিয়ে জেলা অফিসে যেতে হবে। তাছাড়া এ নিবন্ধন অনলাইনে করা যাবে না।

কিশোরগঞ্জ জেলা কর্মস্থান এবং জনশক্তি কার্যালয়ে এখন শুধু মাত্র সৌদি আরব এবং কুয়েতগামী কর্র্মীরা কোভিড ভ্যাক্সিন প্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন করতে পারবে বলে জানান, ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের বিদেশগামীদের জন্যেও সরকার টিকার ব্যবস্থা করবেন।

(এম/এসপি/জুলাই ০৬, ২০২১)