ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি : উপমহাদেশ খ্যাত চার শত বছরের পুরোনো ইতিহাস সমৃদ্ধ ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশো মাধবদেবের রথ উৎসব বৈশিক মহামারী করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারো অনুষ্ঠিত হবে না। মাধব মন্দির পরিচালনা পরিষদ কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী ১২ জুলাই শুরুর কথা ছিল। রথ যাত্রা উৎসবের যাবতীয় আয়োজনও সম্পন্ন করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সাখেও বৈঠক বলে জানান মাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারী ও ধামরাই পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন। তিনি বলেন গেলো বছরও করোন কারনে এবারো লকডাউনের জন্য আমরা রথ টানা উৎসব স্থগিত করেছি। তবে ভ্যানে করে প্রতি বছরের ন্যায় শ্রীশ্রী যশো মাধব বিগ্রহ ও তার সহচরদের নিয়ে মাধবের কথিত শশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে নিয়ে স্থাপন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানটুকু পালনের সিদান্ত নিয়েছি আমরা।

গত বছরও এই করোনার কারনে ধামরাইয়ের রথ যাত্রা উৎসব বাতিল করা হয়েছে। এই রথ উৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসতো লাখো লাখো ভক্ত।

এই রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশায় থাকতো কয়েক মাসের রোটি রোজীর আয় করার জন্য।

করোনায় এর বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এই করোনায় দ্ইু বারসহ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এপ্রিলের ৯ তারিখে।ইতিহাসের স্বাক্ষী ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ৮০ ফুচ উচু ৪০ ফুট প্রস্থের কাঠের রথটি পাক হানাদার বাহিনী দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পুড়িয়ে দেয়।

সাংবাদিক মেহেদী ইমাম জান কায়সার বলেন ঐতিহ্যবাহী এই রথ উৎসব হলেও সার্বজনীন ভাবে আমরাও এই উৎসব সকলে মিলেই উপভোগ করি । প্রতি বছরই আমাদের সব বাড়িতে রথ উৎসবকে বেন্দ্র মেহমান আসেন।

সংগীত শিল্পী আনিসুর রহমান বলেন থামরাইয়ে এই রথ উৎনবের ইতিহাস চার শত বছরের পুরোনো।করোনার কারনে আমরা এবারও রথ উৎসব উপভোগ করা থেকে বঞ্চি হলাম।প্রতি বছরের মতে এবারো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ির মতো আমাদের বাড়িতে মেহমান আসতো।

মানিকগঞ্জের ঘিওর থেকে শিল্পী রানী সের ধামরাই এসেছেন রথ দেখতে ,এসে দেখেন এবার রথ টানা অনুষ্ঠিত হবে না ।তিনি মাধব দেবতার কাছে প্রার্থনা করেন প্রভু যেনো আমাদের দেশ থেকে দ্রæত এই করোনা মহামারীর হাত থেকে সবাইকে মুক্তি দেন।

সেই সময়ে ধামরাইয়ের রথ উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি।প্রতি বছর এইরধ উৎসব আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।


ধর্মীয় প্রথায় এই রথ উৎসবের গোড়া পত্তন হলেও কালের বিবর্তনে আজ এই উৎসব সার্বজনীনতা লাভ করেছে।
ধামরাইয়ের রথ উৎসবে শুধু মাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আত্মীয় স্বজন আসে না মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরেও আত্মীয় স্বজরা এই উৎসব উপভোগ করতে ভীড় করেন।

ভাষ্কর্য শিল্পী শ্যামল পালের হাতে কাঠ বাটালীর ছোয়ায় গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী দুটি রথে ঘোড়া।
ধামরাইয়ের চার শত বছরের পুরাতন রথ উৎসব ও শ্রীশ্রী যশো মাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এই ঘোড়া দুটি নির্মানের যাবতীয় খরচ বহন করেছেন। আগামী ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত হলে এই ঘোড়া দুটি রথের সামনে স্থাপন করে রথ টানা কথা ছিল,হলোনা।

সেই সময়ে ঐতিহ্যবাহী সেই রথের সামনে দুটি নিপুন সৌন্দর্য্যময় কারুকাজ করা কাঠের দুটি ঘোড়া প্রতি ব্ছর রথ টানার সময় লাাগিয়ে লাখো ভক্তরা টেনে নিত মাধব দেবতার শুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে। পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের সাহিত্য কর্মে ‘ধামরাই য়র রথ’ কবিতার চয়ন গুলিতে স্থান পাওয়া এ রথটি এখন আর নেই।

(ডিসি/এএস/জুলাই ১১, ২০২১)