মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের জামালপুরে শহিদুল্লাহ’র বাড়ি হতে আ. ছাত্তার মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত দু’পায়ে হাঁটার জন্য ফসলি জমি কেটে রাস্তা চায় না গ্রামবাসী। রাস্তা প্রশস্থ করণের নামে ইউপি সদস্য হারুন মিয়া প্রান্তিক কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে এবং মানুষের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে ও মসজিদের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের পায়তারা করছেন। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার এলাকার ৪২ জনের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে জমা দিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে এর অনুলিপি দিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দেয়া অভিযোগত্রের বিষয়বস্তু হুবুহু তুলে ধরা হলো, আমরা জামালপুর গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ কৃষক। আমাদের কৃষি জমিতে আমরা বৎসরে ৩ (তিন) বার উন্নত জাতের ধান চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। আমাদের কৃষি জমির উপর দিয়ে পায়ে হাটার উপযোগী একটি রাস্তা আছে। উক্ত রাস্তাটিকে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার জনাব মো. হারুন মিয়া রাস্তার পার্শ্বের জমির মালিকগণকে না জানিয়ে জোর পূর্বক ১০ ফুট প্রস্থ করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে একটি প্রকল্প বানিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। উক্ত অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণ করা হলে কৃষি জমি, ভিটি বাড়ি উচ্ছেদসহ মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম হয়েছে।

ওই এলাকার মসজিদ কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়া জানান, কার স্বার্থে কি কারণে এ রাস্তা প্রশস্থকরণ করা হচ্ছে আমরা জানিনা। ইউপি সদস্য হারুন মিয়া মেম্বার আমাদের আগে থেকে কোন কিছু না বলেই তার দলবল নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার আগেই কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে গর্ত সৃষ্টি করে কৃষি জমির উপর দিয়ে রাস্তা প্রশস্থকরণের কাজ করছে।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, যদি ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয় তাহলে আমাদের কৃষি জমির ক্ষতি হবে। আমরা অনেকেই এই তিন ফসলি কৃষি জমির উপর নির্ভর করে চলি। এছাড়া কৃষি জমি কেটে রাস্তায় মাটি ভরাটের কারণে কৃষি জমির পাশাপাশি ভিটা বাড়ি উচ্ছেদসহ শত বছরের দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদের কিছু অংশের ক্ষতি হবে। আমাদের পূর্বের যে রাস্তাটি আছে তা দিয়ে আমাদের চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রাস্তার প্রশস্থ করার জন্য আমাদের কৃষি জমি, ভিটা বাড়ি ও মসজিদে যে জায়গায় নিচ্ছে এতে করে সাধারণ কৃষকসহ এলাকাবাসী অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ভূক্তভোগী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাজল মিয়া জানান, আমি গরিব মানুষ অন্যের উপর নির্ভরশীল। এই রাস্তা নির্মাণ হলে আমার ঘর ভাঙ্গা পড়বে। এতে করে আমি আর্থিক ও মানষিক ক্ষতির সম্মুখিন হবো। আমার জায়গা এবং ঘর উভয় চলে যাবে। আমার থাকার আর কিছুই থাকবে না। কে জায়গা দিবে, কে ঘর করে দিবে। এই ভিটি বাড়িটি ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। আমি এই রাস্তা প্রশস্থকরণ চাই না।

এ প্রসঙ্গে শিবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন মিয়া জানান, মানুষের ক্ষতি জন্য মানুষের উপকারের জন্যই এই রাস্তাটি প্রশস্থ করা হচ্ছে। তবে, পাকা ভবণ ভেঙ্গে কিংবা ঘর-বাড়ি নষ্ট করে এই রাস্তা করা হবে না। জামালপুর গ্রামের গাঙকুল হাটি এবং মাইজপাড়ার মানুষের সুবিধার্থে এই রাস্তা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারের শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পূর্বের রাস্তাটির মেরামত এবং প্রশস্থ করার জন্য এমপি বরাদ্ধে একটি প্রকল্প দেয়া হয়েছে। রাস্তার এই কাজটি কারো ব্যক্তি স্বার্থের জন্য করা হচ্ছে না। তাদের সুবিধার জন্যেই এই কাজ করা হচ্ছে।

(এমএ/এসপি/জুলাই ১১, ২০২১)