শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বিশাল আকৃতির কোরবানির গরু দিনাজপুরের বস ঘোড়াঘাটে রয়েছে। এই গরুর নাম রাখা হয়েছে, দিনাজপুরের বস। ছয় ফুট ৪-ইনিচ উচ্চতা এবং ৩১-মন ওজনের এই গরুর দাম হাকা হয়েছে ১৫-লাখ টাকা। ইতিমধ্যে নয় লাখ টাকা মূল্য উঠেছে। অন্যদিকে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরে গরু মোটাতাজাকরনে ব্যস্ত খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।দেশীয় গরুর পাশাপাশি মাংস উৎপাদনকারী বাহামা জাতের গরু মোটা তাজাকরণের মাধ্যমে লাভের আশা করলেও করোনা পরিস্থিতিতে গরু নিয়ে শংকাছ খামারিরা।

মাত্র চার বছর বয়সে একটি গরুর ওজন হয়েছে ১ হাজার ২০০ কেজি। অর্থাৎ প্রায় ৩১ মণ। বোঝাই যাচ্ছে, এটি দ্রুতবর্ধনশীল। তাই একে ভালোবেসে মালিক নাম দিয়েছেন ‘দিনাজপুরের বস’। জেলার ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার বড় গলিতে নেচার ফ্রেশ ডেইরি খামারে এর দেখা মেলে।

খামারে গিয়ে দেখা যায়, গলায় রশি ও দু’পাশে টানা দিয়ে দানব আকৃতির এই গরুকে বেঁধে রাখা হয়েছে। এর দেখভাল করছেন মালিক নিজেই। আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন আসছে, সেটি দেখতে। কেউ কেউ গরুটির সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত। কালো চামড়ার ‘দিনাজপুরের বসে’র উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি।

খামারের মালিক মালিক শাহ নেওয়াজ জানান, গরুটি প্রতিতদিন প্রায় ১২০ লিটার পানি পান করে। এ ছাড়া একে প্রতিদিন ১২ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ২০ কেজি খড় খাওয়ানো হয়।

ফিজিয়ান জাতের এই গনুর বয়স চার বছর। তাঁর খামারের একটি গাভি থেকে এটি জন্ম নেয়। খাদ্যাভ্যাস ভালো থাকায় এর ওজন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০’শ ৪০ কেজি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক দর্শনার্থী ও গনু ব্যবসায়ী একে দেখতে আসেন। অনেকেই কিনতে চান। এখন পর্যন্ত গরুটির দাম উঠেছে ৯ লাখ টাকা।

দীর্ঘ চার বছর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে গরুটিকে বড় করেছেন। আদর করে নাম রেখেছেন “বস” । “বস” বলে ডাকলেই মাথা নেড়ে সাড়াও দেয়। ষাঁড়টি দেখতেও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। প্রতিদিন লোকজন আসলেও ভালো দাম বলছেন না কেউই। লকডাউনের কারণে নিতে পারছেন না ঢাকায় বলে জানায় বসের মালিক শাহ নেওয়াজ।

এদিকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে কুরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারীরা। করোনার কারনে দিনাজপুর জেলার সব গরুর হাট বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুও হার বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউন চলছে। লাভের আশায় খামারীরা দীর্ঘদিন গরু মোটা তাজা করণ করে এখন বিক্রি ও দাম পাওয়া নিয়ে শংকায় রছেছে তারা।
দিনাজপুর জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৫৮হাজার ৫৫টি খামারে ১লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩টি কুবানির পশু প্রস্তুত আছে ।

এর মধ্যে ১লক্ষ ২৪জার ২১৬ টি গরু ৭৪ হাজার ৫৬৭ টি ছাগল ।কুরাবীনতে এ জেলায় চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৮ টি পশুর। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৫৪ হাজার ৫১৫ পশু বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে । খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম ও বাজার নিয়ে জেলায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ৫৮হাজার খামার মালিক । এদিকে করোনার কারনে বসবে না পশুর হাট এ নিয়েও বড় দুশ্চিন্তায় তারা ।

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা জানালেন, খামারীদের গরু লালন পালনে বিভিন্ন দিকনিদের্শনা প্রদান করা হচ্ছে ও করোনার কারনে অনলাইনে পশু বাজারজাত করা হবে। পাশাপাশি জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় গরু আমদানি করতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি ।

অনলাইন কেনাবেচায় উৎসাহিত করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। দিনাজপুর প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.আশিকা আকবর তৃষা জানান,শুধু দেশীয় জাতেরই নয়, বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাংস উৎপাদনকারী বাহামা জাতের বাছুর উৎপাদনের পাশাপাশি মোটা তাজাকরন করেছেন খামারীরা। চলতি বছরে দিনাজপুর জেলা ৬০ হাজার ৫২০ জন খামারী মোটা তাজাকরনের মাধ্যমে ১ লাখ ৯১ হাজার ২১৪টি গরু প্রস্তুত রেখেছেন। জেলার চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪১৭ টি গরু, যাতে করে এবারে ৮৩ হাজার গরু উদ্বৃত্ত হিসেবে অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে গো-খামারিরা চরম লোকসানের মুখে গড়বেন এমনটাই মনে করছেন সংশিলষ্টরা।

(এস/এসপি/জুলাই ১৫, ২০২১)