অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যুর খবর। গ্রামের মসজিদের মাইকে নিয়মিত ভেসে আসছে মৃত্যুর সংবাদ। গভীর রাত পর্যন্ত গোরস্থানগুলোতে লাশ দাফনের দৃশ্য। শহর ও গ্রামীন পরিবেশ এখন নিয়মত জানাজার চিত্র চোখে পড়ে। ভারত ঘেষা ঝিনাইদহ জেলায় এখন মৃত্যু অতি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। করোনার পাশাপাশি উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হচ্ছে।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, জুলাই মাসের মাত্র ১৫ দিনে ঝিনাইদহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৯ জন ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৫৫ জন। আর করোনা শুরুর সাড়ে পনের মাসে মারা গেছে ১৫৭ জন। মৃত্যুর এই সংখ্যা ঝিনাইদহের মতো ছোট্ট জেলার জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয় বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মনে করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে গত ১ জুলাই ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১০ জন, ৪ জুলাই মারা গেছেন ৮ জন, ৫ জুলাই ৮ জন, ৬ জুলাই ৪ জন, ৭ জুলাই ১১ জন, ৮ জুলাই ৩ জন, ৯ জুলাই ১৫ জন, ১০ জুলাই ৯ জন, ১১ জুলাই ৭ জন, ১২ জুলাই ৮ জন, ১৩ জুলাই ১২ জন, ১৪ জুলাই ১৪ জন, ১৫ জুলাই ৭ জন ও সর্বশেষ শুক্রবার (১৬ জুলাই) ৮ জন মারা গেছেন।

এছাড়া জেলার বাইরে মৃত্যুবরণকারী ঝিনাইদহের বাসিন্দাদেরও জেলার বিভিন্ন গ্রামে দাফন করতে লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে। সে হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। অনেকের করোনা পরীক্ষার সুযোগ হচ্ছে না। অথচ রোগীর উপসর্গ ছিল এমন কথা মৃত্যুর পর জানা যাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে করোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি উপসর্গ নিয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। সব থেকে গ্রামেই এখন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। গ্রামের মানুষ সাধারণ সর্দ্দি জ্বর মনে করে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। মহেশপুরের ফতেপুর ইউনিয়নের একতারপুর ও শৈলকূপায় একই পরিবারের একাধিক সদস্যের এমন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ জানান, গ্রামের মানুষ এমন সময় রোগী হাসপাতালে নিয়ে আসছেন, যখন রোগী খুবই মুমুর্ষ। তখন হয়তো রোগীর হাই ফ্লো অক্সিজেন দরকার। সবগুলো এক্টিভ থাকায় আমরা হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে পারছি না। তখনই রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীকে আনা হলে করোনা পরীক্ষা করে সাধারণ অক্সিজেন ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব হয়।

এদিকে সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, গ্রামের মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়। তারা সাধারণ সর্দ্ধি জ্বর মনে করে বাড়িতেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে।

তিনি জানান, কোভিড-১৯ সনাক্ত হওয়ার পর ঝিনাইদহে গত সাড়ে ১৫ মাসে করোনায় ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসের ১৫ দিনে করোনায় মারা গেছে ৬৯ জন। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫ জুলাই পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ১৪৭ জনের লাশ দাফন করেছে।

(একে/এসপি/জুলাই ১৬, ২০২১)