রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে ও নাগেশ্বরীতে দুটি পৃথক গরুর হাটে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে প্রতিকারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই নজরদারি কিংবা প্রশাসনিক পদক্ষেপ। স্থানীয়  প্রশাসন এবং হাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিজয়স্তম্ভ এবং শহীদ মিনারের সাধারণ মানুষ স্যান্ডেল পায়ে উঠছে, কেউ পান-বিড়ি-সিগারেট অথবা বাদামের দোকান সাজিয়ে করছেন ব্যবসা।

শুক্রবার কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলার দুটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গরুর হাটে এ চিত্র দেখা গেছে। সেই প্রতিষ্ঠান দুটিতে নির্মিত শহীদ মিনারে এরকম ঘটনায় মারাত্মক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহল।

তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিকারের আশ্বাস দেয় সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিনে শুক্রবার জুমআর নামাজ শেষে বিকেল ৩টার পর থেকে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে বসা গরুরহাটে ও নাগেশ্বরীর কচাকাটায় এ চিত্র দেখা যায়। দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের শহীদ মিনারে বিভিন্ন বয়সের মানুষ জুতা, স্যান্ডেল পরে গরুর হাটে যেতে ওঠানামা করেন। দু’জন ভ্রাম্যমান পান-সিগারেট এবং বাদাম বিক্রেতা দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। কিন্তু হাট এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে শহীদ মিনারের অবমাননা করলেও কারো চোখে সে দৃশ্য পড়ছে না। একই দিনে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভটির সামনের বেদীতে ট্র্যাকে গরু উঠা নামা করে দিনভর। এতে বেদীর উপর গরু মানুষের উঠা নামা এবং গরুর গোবর দিয়ে বেদীসহ বিজয় স্তম্ভটি নোংরায় পরিণত হয়েছে।

দুগার্পুর হাটে শহীদ মিনারে ওঠা মজিবর (৬০) বলেন, বাবা এটা হামার অন্যায় হইছে। কি করমু হাটত তো বসপার কোন জায়গা নেই। তাই সবার দেখি হামরাও উঠছি। ছাগল কিনে শহীদ মিনার উপর দাঁড়িয়ে থাকা শহিদুল আলম বলেন, পরিবশেটাই এমন। আসলে এটা আমাদের ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি অমর্যাদা করা হচ্ছে। বাদাম বিক্রেতা নজু মিয়া বলেন, হামরা ওগলা বুঝি না। সগাই চরে তাই একনা উটি বাদাম বেচাই।

গরু বিক্রি করতে আসা আলম মিয়া বলেন, শহীদ মিনারে স্যান্ডেল পড়ে ওঠা এটা আজকে নতুন না। প্রতি হাটে মানুষ শহীদ মিনারে এভাবে ওঠানামা করে। উলিপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফয়জার রহমান বলেন, শহীদ মিনারে জুতা, স্যান্ডেল পরে ওঠা এটা জাতিকে অপমান করা। হাট এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে-এ-জান্নাত রূমি বলেন, আমাকে কেউ এ বিষয়ে বলেনি। তবে শহীদ মিনারের সম্মান যাতে কেউ ক্ষুন্ন করতে না পারে সেজন্য আমি উদ্যোগ নেবো।

(পিএমএস/এএস/জুলাই ১৭, ২০২১)