অহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : মাদারীপুরে কৃষকদের প্রযুক্তিগত কলা কৌশল আর উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক সজিব হোসেন সাদ্দাম। ভালো ফলন ও বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন অন্যরা। প্রতি বছর ড্রাগন চাষে আবাদী জমির পরিমান বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা কৃষি সম্প্রসারণের। পুষ্টি গুণে ভরপুর ড্রাগন ফল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা দরে। গত বছরের বন্যায় ড্রাগন বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর আবার আবাদ করেছে ড্রাগন বাগান। বাজারে ড্রাগনের ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে তার মুখে। 

ড্রাগন চাষি সজিব হোসেন সাদ্দামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের সজিব হোসেন সাদ্দাম থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভুটান ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে ড্রাগন ফলের চাষ দেখে বাগান করার আগ্রহী হয়। তাই তিনি দেশে ফিরে ৬ একর জমিতে সাড়ে ১১শ‘ খুঁটিতে সাড়ে ৪হাজার গাছে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে রোপন করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত কলা-কৌশল আর সার্বিক সহায়তা পাওয়ায় তার মতো আরো চাষি ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রোপন করা চারা থেকে ড্রাগন ফলের সফলতা আসার আগেই জুলাই মাসের দিকে আকস্মিক বন্যায় তার বাগান বিনষ্ট হয়ে যায়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর জানুয়ারি মাসে আবার শুরু করেন ড্রাগন চাষ। তার বাগান করতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গাছে প্রচুর ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। মাসে দুইবার ফুল আসে। একটি খুঁটিতে চারটি করে গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি খুঁটি থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতি কেজি ফল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি করছেন। সাদা, লাল ও গোলাপী রঙের ফল ভিটামিন যুক্ত ড্রাগন ফল পুষ্টিতে ভরপুর। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং ভালো মূল্য পাওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটেছে।

সাদ্দামের বাবা ও বড় ভাইসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সময় দিচ্ছেন ড্রাগন বাগানে। ৭ জন শ্রমিক বাগানে কাজ করে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার পাশাপাশি ভালো ভাবেই সংসার চলছে তাদের। এ বছরই সাদ্দাম হোসেন তার বাগান থেকে ড্রাগন বিক্রি করে খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ড্রাগন বাগানের কোন ক্ষতি না হলে একই গাছ থেকে কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে বলে জানান সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হোসেনের ড্রাগন বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ মাদারীপুর জেলাসহ পার্ম্ববর্তী জেলার লোকজন আসছে এবং ড্রাগনের চারা নিয়ে বাগান করছেন। সাদ্দাম হোসেন ড্রাগন বাগান ছাড়াও আরো ৬ একর জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আগামীতে তিনি আরো বেশি জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

সাদ্দামের বাবা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার জানান, তার ছেলেদের সাথে ফল বাগানে সার্বক্ষণিক থাকেন। দূর দুরান্ত থেকে শত শত মানুষ আসছেন ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে। এতে তার বেশ আনন্দ লাগে। অনেক দর্শনার্থী তাদের বাগান থেকে তাজা ড্রাগন ফল কিনে নিচ্ছেন এবং অনেকে বাগানে বসেই খাচ্ছেন। আবার অনেকে বাগান করার জন্য ড্রাগনের চারাও নিয়ে যাচ্ছেন।

শরিয়তপুরের মিলন মোল্লা জানান, তিনি সাদ্দাম হোসেনের ড্রাগন ফলের বাগান দেখার জন্য এসে গাছের তাজা ফল খেয়েছেন। তিনি বাগান ঘুরে ঘুরে দেখছেন। খুব ভালো লেগেছে। তিনি ড্রাগনের বাগান করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শিবচর উপজেলার ইয়াদুল ইসলাম জানান, ড্রাগন ফলের বাগান করার জন্য তিনি চরনাচনা গ্রামে ড্রাগন চাষী সাদ্দামের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফলের বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ড্রাগন ফলটি পুষ্টিতে ভরপুর। এর দামও অনেক ভালো। ফলে চাষী ভাইয়েরা এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের চাষী ভাইয়েরা ফল বিক্রি করতে শুরু করেছেন। চাষী ভাইয়েরা ৫শ’ টাকা প্রতি কেজি মূল্যে ড্রাগন ফল বিক্রি করছেন।’

(ওকে/এসপি/জুলাই ১৮, ২০২১)