স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করতেন জাহাঙ্গীর গাজী। গত দুই বছর যাবত তিনি ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে মিসরে পাচারের জন্য ১১ লাখ ২০ হাজার রিয়াল নিয়ে দেশ ছাড়ার সময়ে বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এসব মুদ্রা দিয়ে পাচারের জন্য স্বর্ণ কেনা হয় বলে ধারণা বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কেনপি-১-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউল হক।

এর আগে সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে এসব মুদ্রা পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে যাত্রী জাহাঙ্গীর গাজীকে গ্রেফতার করে এপিবিএন সদস্যরা। জাহাঙ্গীরের গন্তব্য ছিল তুরস্ক। অত্যন্ত সুকৌশলে লাগেজে ১০টি শার্টের মধ্যে লুকিয়ে ১১ লাখ সৌদি রিয়ালসহ আটটি দেশের মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত এসপি মো. জিয়াউল হক বলেন, জাহাঙ্গীর গাজী ভোর সাড়ে ৬টার দিকে টার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ইস্তাম্বুল যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে আসেন। সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ৫০ হাজার রিয়ালের কথা বলেন। পরে তার লাগেজ তল্লাশি করে ১১ লাখ ২০ হাজার সৌদি রিয়ালসহ আরও ৮টি দেশের মুদ্রা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইউএস ডলার, মালশিয়ান রিঙ্গিত, কুয়েতি দিনারসহ বিভিন্ন মুদ্রা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- আগে রাজধানীর গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করতেন জাহাঙ্গীর গাজী। গত দুই বছর ধরে তিনি ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আমরা তার পাসপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, পাঁচটি দেশের ভিসা রয়েছে তার।

‘ইমিগ্রেশনের ১২৫টি সিল লাগানো আছে। ৬৫ বারের মত তিনি দেশের বাইরে যাতায়াত করেছেন। সাধারণত আমারা দেখি কমার্সিয়াল যাত্রীদের জন্য সরকার যে সুবিধা দেয়, তারা বিভিন্ন পোডাক্ট বিক্রি করে একটা লাভের অংশ নিয়ে নেয়। কিন্তু সেই লাগেজ ব্যবসা থেকে তিনি হুট করে পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন’ যোগ করেন অতিরিক্ত এসপি।

অতিরিক্ত এসপি মো. জিয়াউল হক আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, বিভিন্ন প্রবাসীর কাছ থেকে এসব রিয়াল সংগ্রহ করে এবং তা একত্রিত করে পাচার করা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকার কোনো রাজস্ব পায় না। এই কারেন্সিগুলো ইস্তাম্বুল হয়ে মিশরে পাচারের কথা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘এই কারেন্সি বহন বা পাচারের জন্য গ্রেফতার আসামিকে অন্তত চার-পাঁচ লাখ টাকা দিতেন চক্রের সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে- এখান থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। পরে সেখানে গিয়ে বাল্ক এমাউন্টে গোল্ড কেনা হতে পারে। সেগুলো আবার বাংলাদেশে আসতে পারত। এতে দুই দিকেই বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হত। একদিকে টাকা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ট্যাক্স ছাড়া স্বর্ণ বাংলাদেশে পাচার হত। এই দু’টি কাজেই বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হত।’

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২১)