রায়পুরে বৃদ্ধকে পিটিয়ে জখম করলেন নাতি ও পুত্রবধূরা
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মনির হোসেন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে নাতি ও পুত্রবধূরা। তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাইচা গ্রামের আব্বাস আনাজি বাড়িতে।
নিজের জমিতে ভবন তুলতে গেলে সৌন্দর্য নষ্টের অযুহাতে পুত্রবধূ তাহমিনা আক্তার (৩৫), জান্নাতুল ফেরদাউস নাদিয়া (৩০), নাতি তানভির হোসেন জিহাদ (২০) ও মোঃ সাজ্জাদ (১৫) এ হামলা করেছেন বলে বৃদ্ধের অভিযোগ। অপরদিকে শশুর, শাশুড়ি ও ননদের হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ এনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই পুত্রবধূ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ মনির হোসেন (৬৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক কষ্ট করে ৪ ছেলে শহিদ উল্যা, মোঃ কাদির, মোঃ জায়েদ ও মোঃ রশিদকে আমি বিদেশে পাঠাই। তাঁরা টাকা পাঠালে আমি আমার জমিতে তাঁদের জন্য ৪ ইউনিটের একটি ভবন নির্মাণ করি। বড় ২ ছেলে শহিদ ও কাদির ভবনের জমি লিখে নেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে বাড়ির পুরো জমি হেবা দলিল করে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে আমি হেবা বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা আমাকে স্ত্রীসহ ঘর থেকে বের করে দেয়। জানতে পেরে ছোট দুই ছেলে জায়েদ ও রশিদ আমাকে ও তাদের মা ফুলমতি বেগমকে (৫০) সৌদী আরবে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বছরখানেক আগে দেশে আসি। এরপর আমাদেরকে পুত্রবধূরা আর ওই ভবনে উঠতে দেয়নি।
এ নিয়ে বহু দেন-দরবার করেও কোনো ফল পাইনি আমরা। তাদের ভবনের পাশেই একটি ছোট্ট টিনের ঘর করে আমরা বসবাস করতে থাকি। বিষয়টি নিয়ে রবিবার রাতে লক্ষ্মীপুরে এক আইনজীবীর বাসায় উভয়পক্ষের বৈঠক হয়। সেখান থেকে বড় দুই ছেলের জন্য ৩ শতাংশ করে ৬ শতাংশ এবং ছোট দুইজনের জন্য একই পরিমাণ জমিতে ঘর তুলতে বলা হয়। সোমবার সকালে ওই জমিতে ঘর তুলতে গেলে পুত্রবধূ ও নাতিরা বাঁধা দেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে কাঠ ও ইট দিয়ে পিটিয়ে আমাকে মৃত ভেবে রাস্তার উপরে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার স্ত্রী ফুলমতি বেগম (৫০ ও কন্যা রেহানা বেগম (৩০) এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রায়পুর হাসপাতালে ভর্তি থাকা অভিযুক্ত প্রবাসী শহিদ উল্যার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার (৩৫) ও মোঃ কাদিরের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস নাদিয়া (৩০) বলেন, শশুরকে মারধরের ঘটনাটি সঠিক নয়। আমরা আমাদের ভাগের জমি বুঝিয়ে না দিয়ে ভবন করতে শশুর মনির হোসেনকে নিষেধ করি। কিন্তু তিনি আমাদের বাঁধা মানেননি। উত্তেজিত হয়ে তিনি, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ আমাদেরকে পিটিয়ে আহত করেছেন।। তিনি কিভাবে আহত হয়েছেন আমরা জানিনা।
রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাফায়েত হোসেন বলেন, বাবা-মাকে থাকতে না দেওয়ায় ছোট দুইভাই বড় ভাইদের সাথে একই ভবনে থাকতে চান না। এজন্য তারা বাড়ির মুখে আলাদা ভবন করতে চায়। বৃদ্ধ মনির ছোট ছেলেদের জন্য ভবন করতে গেলে বাড়ির সৌন্দর্য নষ্ট হবে এমন অযুহাতে বড় ছেলের স্ত্রী ও ছেলেরা বাঁধা দেয়। বৃদ্ধকে দেখতে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে গিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(পিআর/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২১)