রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে কঠোর বিধিনিষেধের প্রভাব ফেলেনি সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিধিনিষেধে শহর ও গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। নানা অজুহাতে রাস্তায় লোক সমাগম দেখে বোঝার উপায় নেই কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মোটর সাইকেল আর প্রাইভেট কার দখল করে নিয়েছে সড়কগুলো। প্রশাসন থেকে যতক্ষণ নজরদারী থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা চলে যাওযার পর লেজে গোবরে অবস্থা হয় সড়কের। এছাড়াও  ভ্রাম্যমাণ আদালতে কাউকে আটক করা হলেও অজুহাতের কারণে ছাড়া পাচ্ছেন তারা। ফলে সরকারের কোভিড নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে কোরবানি ঈদের আমেজে অনেকেই পরিবারসহ দল বেঁধে ছুঁটছেন আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে। গ্রামের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সেখানে স্বাভাবিক দিনের মত দোকানপাট সব খোলা থাকছে। চায়ের দোকানে ভীড় জমাচ্ছে লোকজন। দূর থেকে প্রশাসনের গাড়ীর শব্দ কানে আসলেই দোকানপাট বন্ধ রেখে সবাই ছুটে আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে। তাদের নিজেদের মধ্যে নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা।

গত দু’দিনে ভ্রাম্যমান আদালতে আটকে পরা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রশাসনের নজরদারি না থাকার কারণে রাস্তায় বের হচ্ছেন। যেহেতু বের হলে কিছুই হয় না, তাই কারণে অকারণে সবাই বাইরে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন মোড়গুলোয় মোটর সাইকেলসহ আড্ডায় মেতে ওঠে তরুন ও যুবকেরা। প্রতিটি গলিতে ঠাসা ঠাসা মানুষ। সবাই যেন চোর পুলিশ খেলায় মেতেছে। শহরের ত্রিমোহণী বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ টিমের মধ্যে আটকা পড়েন দিনাজপুর জেলার পার্ব্বতীপুর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মুসাক আলী মোল্লা। তিনি কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী উপজেলার বাসিন্দা। বাড়ি থেকে নিজস্ব প্রাইভেট কারে সরকারি লোগো লাগিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। তাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যায়নি। তিনি তদবির করে উপর থেকে ফোন করে সেখান থেকে ছাড়া পান। পল্লী বিদ্যুতের চাকুরী করা মোসলেম উদ্দিন স্ত্রী ও সন্তানসহ শশুরবাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে ফেরার সময় মোটর সাইকেলসহ আটকা পড়েন। আধা ঘন্টায় প্রায় অর্ধ শতাধিক মোটর সাইকেল আটক করা হলেও। তদবিরের চাপে অনেকেই সেখান থেকে ছাড়া পান।

সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড় থেকে ধরলা নদী পেরিয়ে ত্রিমোহনীতে মোবাইল টিমে আটকে পরলেন দিনমজুর মফিজ, তার স্ত্রী ও ছোট সন্তান। তিনি জানেন না লকডাউন চলছে। লালমনিরহাট জেলার তিস্তায় মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তারা।

সদর উপজেলার হলোখানা বাজার থেকে টগরাইহাটে যাচ্ছিলেন এক এনজিও কর্মী। তাকে আটক করা হলে তিনি জানান, দশজন উপকারভোগীকে ছাগল দেয়া হয়েছিল। ঈদে সেগুলো বিক্রি হয়েছে কিনা দেখতে যাচ্ছেন। এমন হাজারো কাজে বা অকাজে বের হয়েছেন মানুষ। করোনার ভয়াবহতা তাদেরকে ছুঁতে পারেনি।

সোমবার(২৬জুলাই) জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, করোনা আক্রমনের সংক্রমণ হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৬৯৩জনের নমুনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২৮জন। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এখন পর্যন্ত জেলায় ৪০জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ও মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। ছোট যানবাহনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী এবং মাস্ক বিহিন চলাচলের কারণে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এখন পর্যন্ত ১০৮টি মামলা ও বিভিন্ন কারণে ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকা অর্থদন্ড করেছেন।

এ ব্যাপারে সোমবার(২৬জুলাই) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র অভিযান পরিচালনা করে নয়, অতিমারীকে ঠেকাতে হলে প্রত্যেককেই সচেতনত হতে হবে।

(পিএমসি/এএস/জুলাই ২৬, ২০২১)