মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাট এলাকায় ইজারা নিয়ে চলছে নানান অভিযোগ। ৪ প্রতিষ্ঠানে ইজারার ডাক নিয়ে ও ডাকের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। উত্তেজনা বিরাজ করছে ইজারাদারদের মাঝে। যে কোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। অপরদিকে ৪ প্রতিষ্ঠানকে টোল পরিশোধ করতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে নানান অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। 

জানা যায়, ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাটে প্রতিবছর ৪ প্রতিষ্ঠান ৪ ভাবে ইজারার ডাক দিয়ে থাকে। এতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে মুরিংঘাট ইজারা দেয়, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নদী পথে ইজারা দেয়, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টোল আদায়ে ইজারার ডাক দেয়া হয়, এছাড়া খেয়াঘাটে ইজারা দেয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস। এবারের অর্থ বছরে রেলওয়ে মুরিং ঘাটের ইজারা পায় উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান উল্লাহ। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নদী পথে ইজারা পায় ইজারাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাত উল্লাহ, খেয়া পারাপারের ইজারা পায় উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান (যদিও তার সাথে আশুগঞ্জ এলাকার নেতৃবৃন্দ রয়েছেন), জেলা পরিষদের ডাক পায় কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজনু সওদাগর। কিন্তু ডাক নিয়ে কারো অভিযোগ না থাকলেও সীমানা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিএ এর সীমানার ডাক ছিল ৫০ গজের ভিতরে। আচমকা ৫০ গজ হয়ে গেছে ৫০০ গজ। এতে ইজারাদারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত ১ সপ্তাহ যাবত ফেরীঘাট এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে বিভিন্ন ইজারাদাররা বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভৈরব পৌর মেয়র, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে রয়েছেন গত ১৪ জুলাই আশুগঞ্জ নিযুক্ত বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ভৈরব ফেরীঘাট রেলওয়ে মুরিং ঘাটসহ নিলামে ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এর আগে গত বছর ২৮ জুন ফেরীঘাট রেলওয়ে মুরিং ঘাটে ডাক দেয়া হয় টেন্ডারের মাধ্যমে। কিন্তু এর মধ্য থেকে বিআইবডিøউ প্রতি বছর ৫০ গজ জায়গার মধ্যে ইজারার ডাক দিতেন। কিন্তু এ বছর ৫০ গজকে ৫০০ গজ নতুন নিলামে ডাক দিয়েছে। কিন্তু সীমানা বৃদ্ধির কোন নোটিশ বা চিঠি সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের দেয়া হয়নি। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশণায় সীমানা বৃদ্ধি করেনি।

ইজারাদার আরমান উল্লাহ জানান, বিআইডব্লিউটিএ বেআইনীভাবে ৫০ গজের স্থলে ৫০০ গজের জায়গায় নিলাম দিয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ের কোন সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মুরিং ঘাটের ডাকে সীমানা দিয়েছেন মেঘনা ফেরীঘাট পুরো এলাকা।

ইজারাদার শেফাত উল্লাহ জাহান, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক আমি টেন্ডারের মাধ্যমে টোল আদায়ের ডাক পেয়েছি। তবে ৫০ গজ হলে আমি বেশী টাকা ব্যায় করে এ ডাক দিতাম না। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক যে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আমি সেখান থেকেই টোল আদায় করব।

ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজনু সওদাগর জানান, আমি জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে নৌকা বা মালামাল থেকে কোন টোল আদায় করি না। ইজারা ডাকের টাকা সমিতি থেকে বহন করি। কারণ একটি ঘাট ৪ প্রতিষ্ঠানে খাজনা দিতে ব্যবসায়ী অতিষ্ট ও হয়রানির শিকার হয়।

খেয়াঘাট প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানান, যুগ যুগ ধরে খেয়াঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় করছি। আমার সাথে কারো কোন দ্বন্দ্ব নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা বলেন, মেঘনা ফেরীঘাটে ৪ প্রতিষ্ঠানে ইজারার ডাক রয়েছে।বিআইডব্লিউটিএ ৫০ গজ জায়গার সীমানাকে ৫০০ গজ করায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য ইজারাদাররা এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ভৈরবে সীমানা বৃদ্ধি করে ডাক দিতে পারে না। এ বিষয়ে সকল ইজারাদারদের একত্রিত করে মীমাংসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

(এম/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২১)