ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের ৩ শিশু। অন্যান্য শিশুর মত স্বাভাবিক জীবন ছিল তাদের। স্কুলে যেত, দুরন্তপনা করে বেড়াত, আবার বাবার কাজেও সহযোগিতা করতো। কিন্তু হঠাৎ এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে আজ শারিররীক প্রতিবন্ধী তিন শিশুই।

প্রথম বড় ভাই রমাকান্ত (১৪) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই এই রোগে আক্রান্ত হয়। তার পরে দ্বিতীয় ভাই জয়ন্ত (১২) এবং তৃতীয় ভাই হরিদ্র (৮) একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথে। তিন ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসেছে।

এই তিন শিশু ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ৩নং বকুয়া ইউনিয়নের বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহ’র সন্তান। শেষ সম্বল বিক্রয় করে দিনমজুর বাবা এখন সকলের কাছে সহযোগীতা প্রার্থনা করছেন শিশুগুলোকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য।

বুধবার (২৮ জুলাই) বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় তিন শিশু বসে রয়েছে। মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত। বাবা মানুষের জমিতে দিনমজুরের কাজে গিয়েছে। মা বাসার কাজের পাশাপাশি সন্তনদের নিয়ে ব্যস্ত থাকছে সবসময়। সন্তানেরা নিজেরা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজেই সহযোগীতা করতে হচ্ছে মা কে ।

খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, প্রসাব পায়খানা সব কিছুতেই মা ছাড়া তারা অচল। দিনমজুরের কাজ করে বাবা যা পায় তাই দিয়ে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া ও পরিবারের খরচ চলে।

কোন প্রকার সরকারি সহযোগীতাও পায়নি এ পরিবারটি। একপ্রকার ক্ষোভ নিয়েই দিনমজুর পিতা বাদুল জানালেন “কি হবে এসব ছবি তুলে? কেও তো আমাদের দিকে তাকায় না। বাচ্চাগুলাকে নিয়ে আমি মহা বিপদে আছি !”

এলাকাবাসিরা জানায়, জন্মের পরেই বাচ্চাগুলো ভালো ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই হাত পা শুকিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাগুলোর। বড় ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের বাবা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। শেষে ডাক্তার জানায় এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তাই পরের দুই বাচ্চার আর কোন চিকিৎসা করায় নাই তাদের বাবা। আর চিকিৎসা করানোর মত টাকাও নেই অসহায় দিনমজুর পিতার। তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন চলছে তাদের।

হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটি একটি বিরল জেনেটিক রোগ। রোগের নাম হচ্ছে (উঁপযবহহব গঁংপঁষধৎ উুংঃৎড়ঢ়যু)। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয় নাই। এই রোগ সাধারনত ছেলেদের হয়ে থাকে। তবে তার তৃতীয় ছেলেটি এখনো সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয় নাই। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করা গেলে তার তৃতীয় সন্তানটি সুস্থ ভাবে বেচেঁ থাকতে পারবে।

(আই/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২১)