পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি : নজরদারিতে রয়েছেন নব্য জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর পাথরঘাটার জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ফোরকান ভাই ওরফে কাতারপ্রবাসী ফোরকান। দুর্ধর্ষ এই জঙ্গি অনলাইনেই তিনটি সেলের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সেলগুলো হচ্ছে- ইদাদ-১, ইদাদ-২ এবং ইদাদ-৩। প্রতি সেলে ২০ জন করে সদস্য রয়েছে। রসায়নশাস্ত্রে পড়াশোনা করায় তিনি বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সূত্র সহযোগী একটি দৈনিককে এসব তথ্য জানিয়ে বলছে, জাহিদ সিটিটিসির নজরদারিতেই আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে জানান, জাহিদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা থানার গোনবুনিয়া গ্রামে। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। তিনি বরগুনার পাথরঘাটায় পানের ব্যবসা করেন, মা আকলিমা বেগম গৃহিণী। তার শ্বশুর শাহ আলম দোকানদারি করেন। স্থানীয় নাচনাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য। এক কন্যা সন্তানের জনক জাহিদের স্ত্রীর নাম হাফসা। মেয়ে তাবিয়ার বয়স এক বছর তিন মাস।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জাহিদ ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ব্যগুনার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে পাথরঘাটা সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান। ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও তিনি তা শেষ করতে পারেননি। নিয়মিত টিউশনি করাতেন। জাহিদ ২০১৬ সালে অনলাইনে দাওয়াত পান। পরে ফেসবুকে তাদের মধ্যে যোগাযোগ চলতে থাকে। এক বছরের মাথায় তিনি ইসমাইল হাসান নামে ফেসবুক আইডি খুলে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। লেখালেখির বিষয় ছিল আকিদা এবং জিহাদ।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা শুনে তিনি আরেকানে গিয়ে জিহাদ করার তাগিদ অনুভব করেন। পরে রোহিঙ্গাদের খাবার দেওয়ার নামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসায় যোগ দেওয়ার উপায় খুঁজতে থাকেন। তখন এক রোহিঙ্গা তাকে আরসা থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তার নাম মোহাম্মদ ফুরকান। ফুরকান চট্টগ্রামে এক মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।

এক পর্যায়ে ফুরকানের মাধ্যমে আরাকানে হিজরত করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন জাহিদ। রসায়নে পড়ালেখা করার কারণে তিনি বই পড়ে, ভিডিও দেখে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরিতে মনোযোগী হন। একে একে অনলাইনে ইয়াদ নামে তিনটি গ্রুপ খুলে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা জাহিদের বিষয়ে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। যেকোনো সময় তিনি ধরা পড়বেন।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী ওই দৈনিক টিকে(যুগন্তর) বলেন, সংগঠনের জন্য জাহিদ নিজে অনুদানও দিয়েছেন। আরাকানের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি সংগঠন থেকে ২০০০ টাকা পেয়েছেন। নব্য জেএমবির নেতা মাহাদী হাসান জনের কাছে জাহিদ খুবই বিশ্বস্ত। তাই তাকে ইমাম মাহাদীর সৈনিক গ্রুপে ক্যাপ্টেন পদে ভূষিত করেন। সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে জাহিদ এ পর্যন্ত পাঁচবার আরাকানে হিজরতের চেষ্টা চালান। সংগঠনের কাজে রোহিঙ্গাদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য দুইবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন থেকে মার্শাল আর্টও শিখেছেন তিনি।

(এটি/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২১)