অহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : মাদারীপুরে করোনা টিকা গ্রহণে হাসপাতালে গ্রামের মানুষের ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪/৫ দিন ধরে করোনা পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণের জন্য লম্বা লাইন দেখা গেছে। যাদের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ। শহর এলাকার মানুষও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন। সারা দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও সচেতন মনোভাব লক্ষ করা গেছে। এদিকে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিবন্ধন ছাড়াই শুধু এনআইডি দেখিয়ে করোনা টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে গ্রামের মানুষ সহজেই করোনা ভ্যাকসিন নিতে পারবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে করোনা ভাইরাস সংক্রমন হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

এদিকে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী শিবচরে এক অনুষ্ঠানে বরেছেন, ‘আপনাদের যে করোনার পরীক্ষা বিনা পয়সায় প্রধানমন্ত্রী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই টেস্ট করাতে বিভিন্ন দেশে ৩/৪ হাজার টাকা লাগে। টিকা অন্যান্য দেশে টাকা নিয়ে দেয়া হয়। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই ভ্যাকসিন জনগণের জন্য ফ্রি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছি। আমরা ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি, যাতে কারো খাদ্যের অভাব না হয়। আমরা আইসোলেশন সেন্টার করেছি, ডায়াবেটিক সমিতি করেছি। এসব স্থানে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবাসহ সকল ধরণের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশের প্রথম করোনা রোগী শিবচরে শনাক্ত হয়েছিল। বর্তমানে কিন্তু মাদারীপুর জেলার মধ্যে শিবচরে শনাক্তের সংখ্যা অনেক কম। আর এটা সম্ভব হয়েছে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায়।’

অন্যদিকে মাদারীপুরের চার উপজেলায় হাজার হাজার নিন্মআয়ের মানুষ ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুদ্দিন গিয়াস, শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আসাদুজ্জামান, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আনিসুজ্জামান, কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান, জেলা এবং উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নিন্মআয়ের মানুষ ও কর্মহীন পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন। পাশাপাশি জনগণকে লকডাউণের স্বাস্থবিধি মেনে ঘরে থাকতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রশাসন এবং করোনা যোদ্ধারা।

সিভিল সার্জন ডা. মো. সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনা শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। এটা আরও বাড়তে পারে। সংক্রমণ রোধে আমরা কাজ করছি। কিন্তু আমরা যেভাবে কাজ করতে চাই, সেভাবে পারছি না। মানুষ এখনো সচেতন নয়। কোনোভাবেই সরকারি বিধিনিষেধ মানানো যাচ্ছে না। অকারণে ঘর থেকে বের হচ্ছে, প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার টহল দিয়ে চলে গেলেই ব্যবসায়ীরা আবার দোকানপাট খুলে বসছে। এ কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এদিকে জেলার করোনা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এটি চালু হবে।’

সচেতন মহলের বক্তব্য, জেলায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিরলস কাজ করছেন। জনগণ সচেতন না হলে কোনোভাবেই লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে না। করোনা সংক্রমনরোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও মানুষের স্বাস্থবিধি না মানার উদাসীনতা বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মানুষকে ঘরে রাখতে চার উপজেলায় হাজার হাজার নিন্মআয়ের মানুষ ও কর্মহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবুও মানুষ অপ্রয়োজনে রাস্তায় চলাচল করছে ঠুনকো অযুহাতে।

(ওকে/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২১)